একটি বাড়িতেও নেই দরজা, তালা নেই ব্যাঙ্কেও; জানুন ভারতের এই ‘আজব গাঁয়ের’ কথা 

আপনি বাড়ি বানালেন অথচ তাতে দরজা করলেন না? শুনতে অদ্ভুদ লাগছে তো? কিন্তু আমাদের দেশেই রয়েছে এমন একটি আজব গ্রাম। গ্রামের একটা বাড়িতেও দরজা নেই। এমনকি গ্রামের পুলিশ স্টেশন, পোস্ট অফিসেও কোনও  দরজা নেই। শুধু তাই নয়, গ্রামে যে ব্যাঙ্কটি রয়েছে নিয়ম রক্ষার্থে তাতে দরজা লাগানো হলেও সেই দরজায় কোনও তালা লাগানো হয়নি। এমনকী গ্রামের বাজার দোকানেও দরজা নেই। 

দরজা নেই দোকানেও

দরজাবিহীন বাড়িতেই টাকা, সোনাদানা, দামি আসবাবপপত্র রেখে নির্দ্বিধায় বেরিয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট খোলা রেখেই বাড়ি ফিরে আসেন। অথচ এখনও পর্যন্ত কোনও চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি ওই গ্রামে। কিন্তু এর নেপথ্যের কারণ কী? গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, স্বয়ং শনি ঠাকুর তাঁদের গ্রামের পাহারাদার। তাই কেউ গ্রামের কোনও বাড়িতে চুরি বা ডাকাতি করার মতো সাহস দেখতে পারবেন না। আর যদি ভুল করেও কেউ চুরি করার সাহস দেখান, তাহলে তাঁর কপালে অশেষ দুর্ভোগ রয়েছে। চোর অন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর অপরাধীর অত্যন্ত খারাপ সময় কাটতে পারে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুও ঘটতে পারে। 

আজব এই গ্রামের নাম শনি-সিঙ্গাপুর, মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় অবস্থিত।  গ্রামবাসীদের এই অটুট বিশ্বাসের পেছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ গল্প। শোনা যায়, আজ থেকে চারশো বছর আগে, গ্রামের পাস দিয়ে বয়ে যাওয়া পানাস্নালা নদী দিয়ে একটি কালো পাথর ভেসে যাচ্ছিল। এক গ্রামবাসী সেই পাথরে একটি রড দিয়ে আঘাত করার পরই নাকি পাথর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই অতি অলৌকিক ঘটনায় গোটা গ্রামে হুলুস্থূল পড়ে যায়। তারপর ঘটনার রাতেই স্বয়ং শনি ঠাকুর গ্রাম প্রধানের স্বপ্নে আসেন এবং জানান ওই পাথরটি তাঁরাই মূর্তি। পাথরটিকে যেন গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

সেই সঙ্গে শনি ঠাকুর স্বপ্নে এও শর্ত দেন, যে তাঁকে কোনও মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা চলবে না। চার দেওয়ালের মধ্যে তিনি আবদ্ধ থাকতে রাজি নন। তাঁকে যেন খোলা আকাশের নীচে কোনও গাছের তলায় রাখা হয়। সেখান থেকেই তিনি গোটা গ্রাম পাহারা দেবেন। সেই থেকেই গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করে আসছেন, স্বয়ং শনি দেব তাঁদের পাহারাদার। 

এই সেই পাথর

বর্তমানে শনি-সিঙ্গাপুর গ্রামের কথা লোকমুখে এতটাই প্রচারিত যে আজব এই জায়গা দেখতে রোজই দেশ বিদেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার পর্যটক আসেন এই গ্রামে। বর্তমানে গ্রামের অর্থনীতির অনেকটাই পর্যটন নির্ভিরশীল। তবে সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী,গ্রামের ব্যাংকের কাঁচের দরজায় একটি তালা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও বাইরে থেকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। 

বিশেষজ্ঞদের মতে কয়েকশো বছর ধরে গ্রামবাসীদের মনে এমনভাবে এই  বিশ্বাস গেঁধে গিয়েছে যে, অপরাধীরাও চুরি করার সাহস পায়না। তবে এক পক্ষের মতে, এই আজব প্রথার জন্য দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে গ্রামটি। তাই নতুন করে প্রথা পাল্টালে গ্রামের প্রতি পর্যটকরা আকর্ষণ হারাবে, সেই আশঙ্কাতে প্রথাটি টিকিয়ে রেখেছেন গ্রামবাসীরা।      

 

Comments are closed.