সুশান্ত ঘোষের ডায়েরি #২: কোনও দলীয় কর্মসূচিতে যখন যাই, কর্মী-সমর্থকরা প্রশ্ন করেন, কেমন আছি?

একটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানভিত্তিক মতবাদ বা চিরায়ত মার্ক্সবাদ মানুষকে এই পথেই চলতে শেখায় যে, পরিস্থিতি পরিবর্তন করার দায় পার্টি সংগঠনের। সঠিক আন্দোলন, যা মানুষকে নিজের জীবন-জীবিকা, রুজি-রোজগারে মাথা উঁচু করে বাঁচার পথে গণ আন্দোলনে শামিল করবে, তা কখনও আপনা-আপনি হয় না। সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের মূল ভিত্তিটি নির্দিষ্ট, ‘বিপ্লব ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ আমরা মুখে বিপ্লবের কথা বললেই বিপ্লব হবে না। যদি না, সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর মতো সংগঠন থাকে। আজ গোটা দেশে ও রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম। সংগঠনের ক্ষেত্রে এ রাজ্যে ঘাটতিই সবচেয়ে প্রকট। তা নিয়েই এই পর্বের লেখার শুরু।

যে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে যখন যাই, কর্মী-সমর্থকরা প্রশ্ন করেন, কেমন আছি? বুকের যন্ত্রণা চেপে মজা করে উত্তর দিই, ‘চালু গাড়ি তালা-চাবি বন্ধ করে গ্যারেজ-বন্দি করলে, প্রথমে টায়ার-টিউব পাংচার হয়, রেডিয়েটার ফুটো হয়, তারপর ইঞ্জিনে জং ধরে। আমার অবস্থা তো ভাই এরকম।’ তবে এখন হালফিলে কেউ প্রশ্ন করলে বলি, চলে যাচ্ছে। তাতে উনি যা বোঝার বোঝেন। কিন্তু সত্যিই কি চলে যাচ্ছে? আদৌ তো চলছে না! যে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থা নিয়ে আমরা সকলেই গর্ব অনুভব করতাম, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে এ রাজ্যে বামপন্থার যে ধারা যুক্ত হয়, পরবর্তীকালে নানা গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তা পুষ্ট হয়েছে। পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট ও ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্টকে সামনে রেখে সংগঠনের যে বিকাশ, যা সত্যিই এক বাম-কর্মী হিসাবে অনুপ্রাণিত করত। আজ সেই সংগঠনের ভয়ঙ্কর পরিণতি হৃদয় বিদারক যন্ত্রণার থেকে আরও কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে বাংলার রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে আমরা বামপন্থীরা গর্ব অনুভব করতাম, সেই বাংলায় ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তি বিজেপি দ্রুত তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে। নির্বাচনী ফলাফলেও যার প্রতিফলন সাংঘাতিকভাবে অনুধাবন করতে পারছি। সেই পরিস্থিতির মোড় ঘোরানোর জন্য আমরা কি আমাদের সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্রতী? নাকি, নানা অজুহাতে আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকে বামপন্থার ক্ষতে মিথ্যা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ফ্যাসিবাদের এই বিপদ বাংলায় হঠাৎ করে আসেনি। এই শক্তি আজ কেন্দ্রের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিজেপি যে প্রথমবার কেন্দ্রের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, তা তো নয়। ১৯৯৮ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ক্ষমতায় আসে। তার আগেই বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই দল দেশের ধর্ম-নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূল সত্ত্বায় আঘাত করেছিল। সেদিনের সেই ঘটনাকে প্রয়াত কমরেড জ্যোতি বসু যে ভাষায় বর্ণনা করেছিলেন, সেই বক্তব্যের মর্মবস্তু কি আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম? নাকি তা উপলব্ধি করার কোনও তাগিদই অনুভব করিনি? যখন এই ভয়ঙ্কর বিপদ ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তিকে সেই সময় লোকসভার তরুণ সাংসদ কমরেড সৈফুদ্দিন চৌধুরী, ‘আগামী দিনে দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ’ বলে নিজের বক্তব্য পেশ করেন (তাঁর অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত না হলেও, এই মতে সহমত ছিলাম), তখন সেই বিপদকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যেও আনিনি। উপরন্তু, সৈফুদ্দিন চৌধুরীর এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে, তাকে রাজনৈতিক পদস্খলন বলে চিহ্নিত করা হয়। একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর যে বাগ্মীতা, তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে হেয় করে তাঁকে এক প্রকার সংগঠন থেকে চলে যেতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। আর আমরা তখন ব্যস্ত ছিলাম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে। কে বেশি বিপজ্জনক, বিজেপি না কংগ্রেস? এ বিষয়ে অনেক চুলচেরা তর্ক-বিতর্ক, বিশ্লেষণের পর, ‘বিজেপি এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ’, পার্টি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও, এই বিপদ মোকাবিলার পন্থা কী হবে, সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক এখনও সূক্ষ্মভাবে পার্টির ভিতরে প্রবাহমান। অথচ সৈফুদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য যে যথাযথ ছিল, সঠিক ছিল, তা পরে প্রমাণিত হয়, যখন বিজেপিকে আটকাতে বামপন্থীদের সমর্থনে দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গড়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে গোটা দেশ।

১৯৯৬ সালে যেদিন এই বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বিজেপি ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দফায় দফায় বঙ্গভবনে হাজির হয়েছিলেন কমরেড জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর অনুরোধ নিয়ে, সেদিন বাংলার মন্ত্রিসভার ছোটখাটো সদস্য হিসাবে এই অধমের সুযোগ হয়েছিল সে দৃশ্য চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করার। সে ঘটনা আজও চোখের সামনে ভাসছে। সারাদিন তো বটেই, গভীর রাত পর্যন্ত চরম ব্যস্ততা। না, সেদিন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বিদ্বজ্জন নেতৃত্ব গোটা দেশের মানুষের আবেগ, সমস্ত বামপন্থী বুদ্ধিজীবীর অনুরোধ মূল্যহীণ করে দিলেন ভোটাভুটির অঙ্কে। যাকে পরবর্তীকালে কমরেড জ্যোতি বসু ‘historical blunder’ (ঐতিহাসিক ভুল) বলে আখ্যা দেন। সেদিন এই কেন্দ্রীয় সরকারে যোগদান করা কিংবা না করার বিষয়ে সেই সকল বিদ্বজ্জন নেতৃত্বের কাছে বাংলার একজন সাধারণ বাম কর্মী হিসাবে আজ আমার জানতে ইচ্ছা করে, অদূর ভবিষ্যৎ কেন, সুদূর ভবিষ্যতেও কি এরূপ দৃশ্যের অবতারণা হবে? যেখানে কোনও একটি দল বাদে দেশের বাকি সমস্ত রাজনৈতিক দল সিপিএম পার্টির কোনও নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হতে অনুরোধ করছেন? এর একটাই উত্তর, না।
শুধু তাই নয়, ভারতবর্ষে বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হল সিপিআইএম। কিন্তু আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর এই দলের পক্ষে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি রক্ষা করা সম্ভব হবে তো? অবশ্য আমাদের নেতৃত্বের এর জন্য যে কোনও একটা ব্যাখ্যা দিতে খুব একটা অসুবিধে হবে না। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় এক ক্ষেত-মজুর পরিবার থেকে উঠে আসা কমরেড সোভান মন্ডলের কথা, তিনি আজ যদিও প্রয়াত। কিন্তু তাঁর কথা, সব মন্তব্যের ব্যাখ্যা আমার জীবনের সঙ্গে গেঁথে গেছে। নেতাদের এই ধরনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, ‘নেতাদের কথা হল কাঁথার মতো। কাঁথার কোনও উল্টো বা সোজা দিক নেই। যে দিকটা ব্যবহার করবে সেই দিকটাই সোজা। এদের ব্যাখ্যা এত কৌশলী, যার মানে ‘না’ও হয় আবার ‘হ্যাঁ’ও হয়। ঠিক যে কোনও একটা ব্যাখ্যা এঁরা দিয়ে দেবেন।’ ঠিক যেভাবে কমরেড জ্যোতি বসুর ‘historical blunder’ বক্তব্যকে পার্টির চার দেওয়ালের মধ্যে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তে ‘closed chapter’এর স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কি দলের তাত্ত্বিক নেতারা পেরেছিলেন দেশের মানুষের কাছে বিষয়টিকে ‘closed chapter’ হিসেবে চেপে দিতে? আজও মানুষের মধ্যে এই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায়। এ কথা অনুভব করলেও স্বীকার করার ক্ষমতা সংগঠনের বড় অংশের নেতাদেরই নেই।
২০০৪ সালে এনডিএ ক্ষমতা থেকে বিদায় হলেও, পরবর্তীকালে একার জোরে ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করতে পেরেছিল। তার বড় কারণ ছিল ১৯৯৮ সালে তাদের সরকার গঠন। তারপর দেশজুড়ে তাদের সংগঠনের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে আজ এ জায়গায় পৌঁছোল। আর আজ আমরা প্রতিদিন ক্ষয়প্রাপ্ত। বিজেপিকে চেনার ক্ষেত্রে কি সত্যিই আমাদের ব্যর্থতা ছিল?

দেশের মানুষ ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মে মাস পর্যন্ত যে কঠিন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও সেই অভিজ্ঞতার শরিক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও তার শাখা সংগঠন বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল ইত্যাদি নামের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও, এদের কাজের ধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা এই রাজ্যের তো বটেই, দেশের মানুষেরও সেভাবে ছিল না। ব্যক্তিগতভাবে আমারও ছিল না। যুগ, যুগ ধরে ধর্ম, জাতপাত, সংস্কারের যে প্রভাব আমাদের সমাজে বিদ্যমান, সেই প্রভাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করার জন্য কীভাবে কাজে লাগানো যায়, বিজেপি তা দেশের মানুষকে দেখিয়েছে।
রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভবে ব্রিটিশ কূটনীতির এক বিশেষ ভূমিকা ছিল। শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থেই একদা প্রচার করা হয়েছিল, জাতীয় কংগ্রেস কেবল হিন্দু অভিজাত শ্রেণীর সংগঠন। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি সেই সাম্প্রদায়িকতার সুযোগ গ্রহণ করতে চেয়েছিল অনেক আগে এবং পরে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই তারা তা করে। বিজেপি নামক হিন্দুত্ববাদীদের প্রধান যুক্তি হল, যেহেতু ভারতে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় হিন্দুরাই প্রধান ভূমিকায় অধিষ্ঠিত সুতরাং ভারত হিন্দু রাষ্ট্র। অন্য ধর্মাবলম্বী লোকেরা সেখানে অবাঞ্ছিত ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। একইরকম বক্তব্য শোনা গিয়েছিল স্বাধীনতালাভ ও দেশ বিভাগের প্রাক্কালে ‘জামাত এ ইসলাম’ এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদির কথাতেও। তিনি পাকিস্তানে ইসলাম ও ভারতে হিন্দু ধর্মের উপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কোনও জনস্বার্থবাহী গণতান্ত্রিক নীতির ওপর ভিত্তি করে নয়। এভাবেই মৌলবাদের জন্ম এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা হয়ে আসছে চিরকাল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি একেই মদত দিয়ে নিজেদের শাসনধারা বজায় রাখতে চেয়েছে।
সংঘ পরিবারের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায় তাদের শপথ বাক্যের দিকে নজর দিলেই। সেখানে বলা হয়, ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এবং আমার পূর্বপুরুষদের সামনে একান্ত ভক্তিভরে আমি এই শপথ করছি যে, আমার পবিত্র হিন্দু, হিন্দু সমাজ এবং হিন্দু সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন রেখে হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করতে আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হচ্ছি। সততায় এবং ব্যক্তিস্বার্থহীনভাবে আমরা কায়মনোবাক্যে সংঘের কাজ সম্পাদন করবো এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই শপথের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো…’। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অধিবাসীরা এদের চিনতে পারছেন?
১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ায় অটল বিহারী বাজপায়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গড়ে বিজেপি। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ১৩ দিনেই সেই সরকারের পতন ঘটে। এরপর ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ এর মাঝে দু’দফায় কেন্দ্রে যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এই দু’বছরে একাধিক প্রধানমন্ত্রীর বদল ও তাঁদের ব্যর্থতা পুণরায় বিজেপির ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে বিজেপি ফের কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। এই সরকারে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হলেও তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফলে অনেকগুলি আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। অটল বিহারী বাজপেয়ী কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন না। তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রে যেহেতু জোট সরকার চলছিল, তাই কিছু বাধ্যবাধকতা তাঁকে মেনে চলতে হত। তিনি জোটের নেতৃত্বের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। আরএসএস সে সময়ও চেষ্টা করেছে কট্টরবাদী পথে কেন্দ্র পরিচালনা করার। কিন্তু তা সর্বক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। জোট শরিকদের সঙ্গে বিরোধের কারণে কট্টরবাদী পথ থেকে তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয়। দিল্লির কেন্দ্রে সরকারে থাকার সুযোগকে ব্যবহার করে বিজেপি সংগঠন বিস্তার ও নতুন নতুন সহযোগী খোঁজার চেষ্টা করেছে। পশ্চিমবাংলায় কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসা তৃণমূল কংগ্রেসকে তারা কাছে টানে। তৃণমূল সে সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হয়। বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সরকারের কাজকর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবুও বাজপেয়ীকে গোটা দেশের মানুষ চিরকাল স্মরণে রাখবে একথা উল্লেখ করতেই হয়। তাঁর নিজস্ব ভাবনায় রচিত ‘সোনালী চতুর্ভূজ’ প্রকল্প সেই সময়ে বাস্তবায়িত হয়। এটি ছিল হাইওয়ে দিয়ে গোটা দেশকে যুক্ত করার প্রকল্প। যা দেশের উন্নয়নের বড় দিকচিহ্ন হিসাবে ভারতবাসী মনে রাখবে। আর বাজপেয়ী কখনও নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেছেন বলেও মনে হয় না।
(চলবে)

 

Comments are closed.