মমতা সুনামি: লোকসভায় হারানো জমি পুনরুদ্ধার করে ৩ কেন্দ্রেই জয় তৃণমূলের, ধরাশায়ী বিজেপি

রাজ্যের তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মমতা-সুনামির কাছে কার্যত খড়কুটোর মত উড়ে গেল বিজেপির যাবতীয় লিড। করিমপুর, কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুর, সবকটি কেন্দ্রেই বিজেপিকে হারিয়ে জয় পেল তৃণমূল। সবচেয়ে বড় কথা, ১৯৯৮ সালে দল প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম খড়গপুর সদর এবং কালিয়াগঞ্জে জিতল তৃণমূল।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া খড়গপুর সদর আসনে উপনির্বাচনে ফেভারিট ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কারণ, লোকসভায় শুধু এই কেন্দ্রে দিলীপ লিড নিয়েছিলেন প্রায় ৪৫ হাজার ভোটের। এই কেন্দ্র জিততে মমতা ব্যানার্জি আস্থা রেখেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ওপর। এক নাগাড়ে খড়গপুরে পড়ে থেকে অসাধ্য সাধন করলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী। নিজের মতো করে ঘুটি সাজিয়ে মিশ্র জনবসতির খড়গপুর জিতলেন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার ফলে দেখা গেল, লোকসভার ৪৫ হাজার লিড ছাপিয়ে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার ২০,৮১১ ভোটে হারিয়ে দিলেন বিজেপি প্রার্থীকে। এই ফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটের দিন পুরো সময় খড়গপুরে রেলের অতিথি আবাসে দুর্গ আগলে বসেছিলেন স্বয়ং বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দাবি করেছিলেন, বিজেপি প্রার্থীর জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাই এই অবস্থায় তৃণমূলের এমন দাপুটে জয় ইঙ্গিতবহ। কার্যত শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পর্যুদস্ত হলেন দিলীপ ঘোষ।
নদিয়ার করিমপুর, একমাত্র এখানেই লোকসভায় লিড নিয়েছিল তৃণমূল। এবারের উপনির্বাচনে সেই লিডকেই আরও বাড়িয়ে নিয়ে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায়। কার্যত হারিয়ে গেলেন ভোটের দিন নিগ্রহের অভিযোগ করা বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। ২৪,১১৯ ভোটে জয়প্রকাশ মজুমদারকে হারিয়ে দিলেন তৃণমূলের বিমলেন্দু। প্রথম দিন থেকে প্রচারে পড়ে থেকে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ ছিল বিজেপির কাছে লিটমাস টেস্ট। লোকসভার নিরিখে এই বিধানসভায় বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর লি়ড ছিল প্রায় ৫৭ হাজার। তৃণমূল আগে কখনওই কালিয়াগঞ্জে জেতেনি। সমস্ত রেকর্ড প্রতিকূল থাকা অবস্থায় বিজেপির টক্করে গিয়েছিল তৃণমূল। প্রার্থী তপন দেব সিংহ দেখালেন, মানুষ রয়েছে ঘাসফুলের সঙ্গেই। বিজেপির ৫৭ হাজারের লিড ছাপিয়ে ২,৪১৮ ভোটে জিতে বাজিমাত করলেন তিনি। হেরে গিয়ে বিজেপি প্রার্থীর আক্ষেপ, এনআরসি ইস্যুই হারিয়ে দিল তাঁদের। এই কেন্দ্রেও দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি, মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জিও প্রচুর সময় দেন কালিয়াগঞ্জে।
সদ্য প্রকাশিত ফল তৃণমূলের পক্ষে ৩ এ ৩ হলেও, ২০২১ সালে বাংলা জয়ের ব্যাপারে এখনও আশাবাদী বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ভোট বুথ কব্জা করেই তৃণমূলের এই জয় বলে অভিযোগ কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। স্বচ্ছ ভোট হলে ফল অন্যরকম হত বলে দাবি তাঁর। আর মমতা ব্যানার্জি বলেন, বিজেপির অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছেন মানুষ। পাশাপাশি, দলীয় কর্মীদের আরও নম্রভাবে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

 

Comments are closed.