এবিভিপির যাদবপুর চলোয় ধুন্ধুমার, পাল্টা জমায়েত, মানব বন্ধন ছাত্র-শিক্ষকদের, বাবুলকে তীব্র কটাক্ষ মমতার

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয় কাণ্ডের প্রতিবাদে এবিভিপির মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার। আজাদির স্লোগান দিয়ে স্টিলের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করল সঙ্ঘ-বিজেপির ছাত্র সংগঠন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হল ইট। পুলিশের লাঠির ঘায়ে ৭ এবিভিপি সমর্থক আহত হয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। পাশাপাশি ইটের ঘায়ে আহত হয়েছেন ১ মহিলা পুলিশকর্মী। অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ এসএফআইয়ের। মানব বন্ধনে যোগ দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মীরা। পরে ছাত্র ছাত্রীরা মিছিল করেন।
এবিভিপির যাদবপুর অভিযানকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই বিরাট পুলিশ বাহিনী রাস্তায় নামে। আনা হয় জল কামান, স্টিলের ব্যারিকেড। নামে রোবো কপ। কার্যত দূর্গে পরিণত হয় যোধপুর পার্ক এবং সেলিমপুর সংলগ্ন এলাকা। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় গড়িয়াহাট রোড সাউথে।

গোলপার্ক থেকে এবিভিপির মিছিল যোধপুর পার্কের কাছে আটকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। সেই মতোই ঢাকুরিয়া ব্রিজ পেরোতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিজেপি-আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের মিছিল। মিছিল আটকাতেই পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট বৃষ্টি। পাল্টা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। ব্যারিকেড ভাঙতে না পেরে ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করেন এবিভিপি সমর্থকেরা। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এবিভিপির অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন তাদের ৭ সমর্থক। এদিকে ইটের টুকরোর আঘাতে আহত হন এক মহিলা পুলিশকর্মী।

পুলিশের তরফ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেডের অপর প্রান্তে বসে অবস্থান বিক্ষোভ করতে পারেন। প্রথমে ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করলেও পরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। অন্যদিকে, এবিভিপির মিছিলকে প্রতিহত করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটে পড়ুয়ারা ভিড় জমান। এবিভিপির বিরুদ্ধে পোস্টার, স্লোগানে ছেয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা ৪ নম্বর গেটের বাইরে মানব বন্ধন করেন।
এদিনই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কাণ্ড নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে আসানসোলের বিজেপি সাংসদকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, কিছুদিনের জন্য মানুষকে বোকা বানানো যায়, সব সময় নয়। দেখছেন না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছিল? কটাক্ষ মমতার। বিজেপির নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সব জায়গায় গায়ের জোরে রাজনীতির চেষ্টা করছে। পাশাপাশি, যে বিজেপি সাংসদকে আসানসোল, দুর্গাপুরের মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছেন, সেখানকার কোল ইন্ডিয়া, চিত্তরঞ্জন লোকোমেটিভের মত কেন্দ্রীয় সংস্থার বেসরকারিকরণ নিয়ে বাবুল সুপ্রিয় কেন চুপ, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী।
গত বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপির নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পড়ুয়াদের একাংশের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর গায়ে হাত তোলা, চুল টানা, এমনকী জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, বাম ছাত্র সংগঠনের তরফে পাল্টা তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ করা হয় বাবুল সুপ্রিয় ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষের গণ্ডগোলে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয় যাদবপুরে। পরে রাজ্যপাল নিজে গিয়ে বিজেপি সাংসদকে উদ্ধার করেন। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। এরপর ঘটনার ৪ দিন বাদে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি।

Comments are closed.