অক্সফোর্ডের পর এবার মানবদেহে করোনা প্রতিষেধকের ট্রায়াল শুরু করছে ব্রিটেনের ইম্পিরিয়াল কলেজ, বিশ্বে চলছে প্রায় ১২০ গবেষণা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রিটেন, করোনা সংক্রমণের হার কোথাও কমেনি। এই মারণ ভাইরাসকে ঠেকাতে একান্ত প্রয়োজন ভ্যাকসিনের৷ আর সেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে সাফল্য কতটা এসেছে, তা দেখতে মানবদেহে নতুন কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হল ব্রিটেনে। বিবিসি সূত্রে খবর, আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে করোনার এই নতুন ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে লন্ডনের ইম্পিরিয়ল কলেজের অধ্যাপক রবিন শ্যাটকের নেতৃত্বে। পশুর শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য মিলেছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। পশুদেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনাক্রমতা বা ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার পর মানব শরীরে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পথে লন্ডনের ইম্পিরিয়ল কলেজ।
আগেই সে দেশের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করেছেন। গোটা বিশ্বে প্রায় ১২০টি কোভিড ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। দ্রুত সাফল্য মিলবে বলে আশাবাদী অক্সফোর্ডের গবেষকরা ৷
ইম্পিরিয়লের ট্রায়ালে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে প্রথম নাম লিখিয়েছেন ক্যাথি নামে বছর ৩৯ এর এক মহিলা। বিবিসিকে তিনি জানান, এই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে তিনি প্রস্তুত। ট্রায়ালে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকলেও তিনি চিন্তিত নন বলে জানান ক্যাথি।
প্রথম দফার ট্রায়ালের পর আগামী অক্টোবর মাসে ৬ হাজার মানুষের উপর দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের পরিকল্পনা রয়েছে ইম্পিরিয়ল কলেজের গবেষকদের। তাঁদের আশা, ২০২১ সালের শুরুতেই দেশের মানুষের কাছে কার্যকরী ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে পারবেন।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম দিনে মাত্র দু’জন স্বচ্ছাসেবীকে টিকা দেওয়া হয়। এরপর এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। বিবিসি সূত্রে খবর, ইম্পিরিয়লের গবেষকরা প্রথম দিনে মাত্র একজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রতিষেধক দেবে। তারপর প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় তিন জনের শরীরে প্রবেশ করানো হবে ভ্যাকসিন। এইভাবে সপ্তাহখানেক চলার পর আস্তে আস্তে বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর উপর প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হবে। অক্সফোর্ডের প্রথম ট্রায়ালে এক মাত্রা করে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইম্পিরিয়লের ট্রায়ালে দুটি করে ডোজ দেওয়া হবে চার সপ্তাহ অন্তর।
সারা বিশ্বে করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতির প্রায় ১২০ টি কাজ এই মুহূর্তে বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। চিন, আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং রাশিয়ায় ১৩টি ট্রায়াল চলছে। তবে কারা আগে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারে সেই দৌড়ে না গিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটাই সবার কাছে মুখ্য বলে জানাচ্ছেন ইম্পিরিয়ল কলেজের অধ্যাপক- গবেষক রবিন শ্যাটক। ইম্পিরিয়লের এই গবেষণায় প্রায় ৪১ মিলিয়ন ইউরো খরচ করছে ব্রিটেন সরকার। তাছাড়া অন্যান্য জায়গা থেকে অনুদানের পরিমাণ ৫ মিলিয়ন ইউরো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিষেধক নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রবল আশাবাদী ইম্পিরিয়লের গবেষকরা।

Comments are closed.