কে এই আইনজীবী এ পি সিংহ, মায়ের অনুরোধে নির্ভয়া মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে লড়তে নেমেছেন

‘আপনি কিন্তু আগুন নিয়ে খেলছেন।’ সোমবার নির্ভয়ার ধর্ষক ও খুনীদের ফাঁসি কার্যকরের দিন আরও একবার পিছিয়ে দেওয়ার আগে চার অপরাধীর মধ্যে তিনজনের আইনজীবী এ পি সিংহকে এই ভাষাতেই ভর্ৎসনা করেন পাতিয়ালা হাউসকোর্টের দায়রা বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা। কে এই আইনজীবী এ পি সিংহ, যাঁর আইনি মারপ্যাঁচে তিনবার পিছল নির্ভয়া দোষীদের মৃত্যুদণ্ড? কে এই আইনজীবী, যিনি আগুন নিয়ে খেলছেন বলে বিচারক তাঁকে সতর্ক করছেন?
নির্ভয়া মামলার দণ্ডিতদের রক্ষা করার চেষ্টার জন্য সারা দেশের বহু মানুষের সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ৪৬ বছর বয়সি আইনজীবী অজয় প্রকাশ সিংহ বা এ পি সিংহ। ৩ মার্চও দোষীদের ফাঁসি না হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে #শেমএপিসিংহ ট্রেন্ড। এই
আইনজীবী লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশ করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করলেও খবরের শিরোনামে আসেন ২০১২ সালে নির্ভয়া মামলার সৌজন্যে। তার আগে তাঁকে লোকে তেমন চিনত না।

কীভাবে নির্ভয়া মামলা হাতে এল? 
সাকেত আদালতে প্রথম নির্ভয়া মামলার অভিযুক্তদের আইনজীবী হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষের রোষের শিকার হন তিনি। সেই সময়ে নির্যাতিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েন এ পি সিংহ। নির্ভয়ার ধর্ষণ ও খুনের মতো একটি জঘন্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনার অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করার দায়িত্ব কেন এবং কীভাবে তাঁর হাতে এল? এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী এ পি সিংহ জানান, তাঁর মায়ের জন্যই এই মামলায় নিজেকে জড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, নির্ভয়া মামলার অন্যতম অভিযুক্ত অক্ষয়ের স্ত্রী একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য বিহার থেকে দিল্লির তিহাড় জেলে যান। সেই সময়েই কেউ ওই মহিলাকে তাঁর কথা বলেছিলেন। এরপর নাকি অক্ষয়ের স্ত্রী ওই আইনজীবীর বাড়িতে যান। কিন্তু সে সময় তিনি বাড়ি ছিলেন না। এ পি সিংহ জানান, বাড়ি ফেরার পর তাঁর মা বলেছিলেন, এই মেয়েটি যেন বিচার পায়, তার জন্য ছেলেকে লড়তেই হবে। তিনি বলেন, এরকম একটি মামলায় জড়ানোর ফল কী হতে পারে মাকে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার বাবা-মা ভীষণই সাধারণ ও আধ্যাত্মিক মনের মানুষ। তাঁরা নির্ভয়ার দোষীদের সাজার জন্য যন্তর-মন্তরে মোমবাতি মিছিলের খবরও জানেন না, টিভিও দেখেন না। এরপরেই অক্ষয় ও বিনয়ের হয়ে প্রথম আইনি লড়াই শুরু করেন আইনজীবী এ পি সিংহ।

বিতর্ক
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন আইনজীবী। তাঁর কথায়, যদি আমার মেয়ে বা বোনের বিবাহপূর্বক যৌন সম্পর্ক থাকত, রাতে যদি সে ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে বেড়াত, তবে সকলের সামনে তাদের জ্ব্যান্ত পুড়িয়ে দিতাম। নির্ভয়ার তুলনা টেনে তিনি বলেন, আমি কখনও এই রকম ঘটনা হতে দিতাম না। নির্ভয়ার বাবা-মায়ের দিকেও আঙুল তুলেছিলেন তিনি।
কখনও আদালতে জানাচ্ছেন, তিনি আর নির্ভয়া মামলার দোষীর আইনজীবী নন, কখনও ঠিক শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি পাঠাচ্ছেন, এ ভাবে তিন-তিনবার এ পি সিংহ দোষীদের ফাঁসির তারিখ পিছতে বাধ্য করেছেন আইনি মারপ্যাঁচে। গত ৩১ জানুয়ারি নির্ভয়ার মা আশা দেবী অভিযোগ করেন, আদালতে তাঁর দিকে আঙুল দেখিয়ে আইনজীবী চ্যালঞ্জ করেছিলেন, অনন্তকালের জন্য এই ফাঁসি পিছিয়ে দেবেন তিনি। আদালতে তাঁর সওয়ালের সময়েও উপস্থিত অনেকে বলে ওঠেন, একেও ঝুলিয়ে দেওয়া উচিত। এ পি সিংহ আবার মৃত্যুদণ্ডের ঘোর বিরোধী। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিচারব্যবস্থা থেকে মৃত্যুদণ্ড উঠিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে নির্ভয়া মামলার গতি বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। খোদ দিল্লি বার কাউন্সিল থেকেও নোটিস পেয়েছেন। তাতেও টলানো যায়নি, আইনের রাস্তায় দোষীদের ফাঁসি আটকে সাজা লঘু করার জন্য লড়ে যাচ্ছেন তিনি।

নির্ভয়া মামলা নিয়ে কী বলছেন এ পি সিংহ?
জেসিকা লাল মামলায় দোষীরা কেন পার পেয়ে গেলেন আর নির্ভয়ার দোষীদের কেন ফাঁসিতে ঝুলতে হবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনজীবী এ পি সিংহ। দোষীদের ফাঁসি আটকাতে সবরকম আইনি তাস তাঁর হাতে আছে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
অনেকেই বিতর্কিত এই আইনজীবীর সঙ্গে দুঁদে আইনজীবী রাম জেঠমালানির তুলনা করেন। দু’জনেই ধর্ষক ও অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল করেন। জেঠমালানি যেমন প্রায়ই মিডিয়ার সামনে বিস্ফোরক মন্তব্য করে ফেলতেন, যে কোনও সমস্যায় মিডিয়ার দিকে আঙুল তুলতেন, আইনজীবী এ পি সিংহও ঠিক তেমনই।

Comments are closed.