হার্ভার্ডের প্রাক্তনী মারিয়ার হাত ধরে করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি সামলাচ্ছে পেরু, তরুণ অর্থমন্ত্রীর জয়জয়কার

মুখে সর্বদাই লেগে রয়েছে চওড়া হাসি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ দোকানদার, প্রত্যেকে পঞ্চমুখ তাঁর প্রশংসায়। ভালোবেসে সবাই তাঁকে টোনি নামে ডাকেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছেন উপহার, কেউ তুলছেন সেলফি, আবার কোনও শিল্পী এঁকে ফেলছেন তাঁর ছবি। তিনি পেরুর অর্থমন্ত্রী মারিয়া আন্তোনিয়েতা আলভা।

পেরুর ৩৫ বছরের অর্থমন্ত্রীই আজ জাতীয় বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। কিন্তু মারিয়া আন্তোনিয়েতা আলভার এমন জয় জয়কারের কারণ কী? কারণ জানতে বেশি কষ্ট করতে হবে না। পেরুর যে কোনও মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই মিলে যাবে উত্তর।

কী সেই উত্তর?

করোনাভাইরাস অতিমারির সময় আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন টোনি। থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে ফের চলমান করতে যার জুড়ি নেই বলে জানাচ্ছেন সদ্য অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জিও। বলতে গেলে, ভারতের অর্থনীতিকে বাঁচাতে নোবেলজয়ীর পরামর্শকেই যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন হার্ভার্ডের প্রাক্তনী পেরুর তরুণ অর্থমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভিস্কারার মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন গত বছর অক্টোবরে। এবং এই কঠিন সময় সবাইকে ছাপিয়ে মন্ত্রিসভার প্রধান তথা মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন তরুণ অর্থমন্ত্রী আলভা। আলভার অধ্যাপক হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডক্টর রিকার্ডো হাউসম্যানও ছাত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলছেন, টোনি না থাকলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হোত পেরুকে। তিনি এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য। পেরু সহ মোট ১০ টি দেশকে করোনা পরবর্তী সময়ের জন্য অর্থনীতি নিয়ে নানান পরামর্শ দিচ্ছে এই কমিটি।

দেশের অর্থনীতির এই কঠিন সময় সাধারণ মানুষকে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলি বোঝাচ্ছেন টোনি। আলভার আগে অর্থমন্ত্রী থাকা কার্লোস অলিভা বলেন যে আলভার কমিউনিকেশন স্কিল এতই ভালো যে, এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন তিনি। মানুষ বুঝতে পারছে সরকার তাদের পাশে রয়েছে। এর মতো নির্ভরতা আর কোথায়?

অতিমারি গোটা পৃথিবীতেই ভয়াবহ আঘাত হেনেছে। এবং এই ভাইরাসকে রুখে দিয়ে লকডাউনের মধ্যেও অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে ও সাধারণ মানুষের জন্য সাহায্যের বন্দোবস্ত করতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন পেরুর তরুণ অর্থমন্ত্রী। লকডাউন উঠে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে ফের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বদ্ধপরিকর তিনি।

৩৫ বছর বয়সি মারিয়া আলভার বাবা পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আলভা জানিয়েছেন, বাবার সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত জায়গাগুলিতে ঘুরে ঘুরে, সেখানকার মানুষের দুঃখ ও দারিদ্র্য নিজের চোখে দেখেছেন তিনি। আর সেখান থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি পাল্টে ফেলার সংকল্প নিয়ে কাজ করে চলেছেন বর্তমানে পেরুতে জাতীয় বীরের মর্যাদা পাওয়া মারিয়া আন্তোনিয়েতা আলভা।

Comments are closed.