১৯৭৭-২০১৬ টানা ৪০ বছর ভোটে লড়ে থামছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, নির্বাচনী রাজনীতি থেকে অবসর জোটের সেনাপতির

১৯৯১ সালে প্রথম বিধায়ক হন সূর্যকান্ত

জীবনে প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। অবিভক্ত মেদিনীপুরের নারায়ণগড় কেন্দ্র থেকে। সে বছর বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে রাজ্যে সরকার গড়েছিল বামেরা। কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন তরুণ চিকিৎসক সূর্যকান্ত মিশ্র। টানা ৪০ বছর ধরে বিধানসভা নির্বাচন লড়ে অবশেষে নির্বাচনী রাজনীতি থেকে অবসরের মুখে সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক। হয়তো কাকতালীয়, কিন্তু জীবনের প্রথম ভোটের মতো ২০১৬ সালে শেষ বিধানসভা ভোটেও হেরেছেন তিনি।
সূর্যকান্ত মিশ্র ১৯৭৩ সালে সিপিএমের সদস্য হন। ১৯৭৭ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। রাজনৈতিক জীবনের গোড়া থেকেই স্বল্পবাক সূর্যকান্ত মিশ্র ছিলেন মেদিনীপুরের অবিসংবাদী নেতা সুকুমার সেনগুপ্তর অত্যন্ত প্রিয়। ১৯৭৭ বিধানসভা নির্বাচনের পরের বছরই বাম আমলে রাজ্যে প্রথম ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। সেই ভোটে লড়েন সূর্যকান্ত মিশ্র। এবং পঞ্চায়েত ভোটে জিতে সেই সময় দেশের সবচেয়ে বড়ো জেলা মেদিনীপুরের সভাধিপতি হন। সেই শুরু পঞ্চায়েতের কাজকর্মের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। পরবর্তীকালে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কার নেতৃত্বে লড়বে বামেরা, এই প্রশ্ন ডালপালা মেলার আগেই দলের অন্দরে সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এবার আর তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না। যদিও সিপিএমের কোনও কোনও নেতা চেয়েছিলেন এবারও দলের রাজ্য সম্পাদক ভোটে লড়ুন। কিন্তু অনড় সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিক কাজেই মন দিতে চান তিনি। ভোটে লড়ার প্রশ্ন নেই।
২০১১ সালে বামেরা ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হন সূর্যকান্ত মিশ্র। বিধানসভার ভেতরে এবং বাইরে তাঁর ভূমিকা সিপিএমের মধ্যে বিশেষ নজর কাড়ে। ২০১৫ সালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হন সূর্যকান্ত মিশ্র। তার আগে ২০১২ সালে কেরলে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেসে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য হন তিনি।
১৯৯১ সালে প্রথম বিধায়ক হন সূর্যকান্ত মিশ্র। ১৯৯১ সালে তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। তারপর ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতর থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্যর মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সূর্যকান্ত মিশ্রর অন্যতম বড়ো ভূমিকা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশেষ করে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য পার্টির একটা বড়ো অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও জোটের প্রশ্নে অনড় ছিলেন তিনি। এমনকী দলের তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রকাশ কারাট এবং একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরোধিতাকেও গুরুত্ব না দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত দলে অনুমোদন করান সূর্যকান্ত মিশ্র। যে জোট ২০১৯ লোকসভায় ভেঙে যাওয়ার বড়ো মাশুল বাম ও কংগ্রেস, দু’দলকেই দিতে হয়েছে। এবার ফের জোট করেই বিধানসভা নির্বাচন লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই শিবির। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে নেই শুধু সিপিএমের অন্যতম সেনাপতি সূর্যকান্ত মিশ্র।

Comments are closed.