ওলা-উবেরের লাগাম-ছাড়া ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ নিতে চায় পরিবহণ দফতর, করা হতে পারে ভাড়ার ঊর্ধ্বসীমা।

একেই রাস্তায় হলুদ ট্যাক্সি পাওয়া দায়। পেলেও তা যেতে চায় না সর্বত্র। তার মধ্যে বর্ষা শুরু হতে না হতেই লাগামছাড়া হয়েছে ওলা-উবেরের ভাড়া। সামান্য দূরত্বের জন্যও দিনের যে কোনও সময় ৩০০-৪০০-৫০০ টাকা ভাড়া হাঁকছে অ্যাপ ক্যাবগুলিতে। যার ফলে জেরবার অবস্থা শহরবাসীর।
এই পরিস্থিতিতে অ্যাপ ক্যাব ওলা-উবেরের লাগামছাড়া ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে প্রাথমিক ভাবনা-চিন্তা শুরু করল রাজ্য সরকার। অ্যাপ ক্যাবগুলির ইচ্ছেমত ভাড়া নেওয়ার ফলে কলকাতাসহ শহরতলি এলাকায় যাত্রীদের কার্যত নাজেহাল অবস্থা। অভিযোগ, দিনের বিভিন্ন সময় মর্জিমাফিক ভাড়া চাইছে এই ক্যাবগুলি। পরিস্থিতির শিকার যাত্রীদের বাধ্য হয়ে চড়া মাসুল চোকাতে হচ্ছে। রাজ্য পরিবহণ দফতরে দীর্ঘদিন ধরে এই সংক্রান্ত নানা অভিযোগ জমা পড়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে ভাবনা-চিন্তা। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওলা-উবেরের এই লাগামছাড়া ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া অবস্থান নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে তাদের ভাড়ার বিভিন্ন ধাপ, কীভাবে তারা ভাড়া নির্ধারণ করে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা উত্তর দিলেই এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরিবহণমন্ত্রী আরও জানান, ২০১৩ সালে অ্যাপ ক্যাবগুলির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে কোনও আইন নেই। কিন্তু এখন তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে, এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই ক্যাব যেন রাস্তায় চলে এবং মানুষেরও যাতে ভোগান্তি না হয় তার জন্য একটা মধ্যপন্থা খোঁজার চেষ্টা চলছে।
সূত্রের খবর, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাবগুলির ভাড়ার তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যান্য রাজ্যে এই অ্যাপের ভাড়ার কোনও ঊর্ধ্বসীমা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পরিবহণ দফতর। প্রসঙ্গত, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার এই অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া বেঁধে দিলে সংস্থাগুলি আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছে। তাই এখানে আটঘাঁট বেঁধে এগোতে চাইছে সরকার।
এদিকে, সারচার্জের নামে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাবগুলি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এই অভিযোগে সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন জনৈক সৌমশুভ্র রায় নামে এক আইনজীবী। আগামী শুক্রবার প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা। সৌমশুভ্রবাবু জানান, মূলত তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে অ্যাপ ক্যাবগুলি ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়াচ্ছে। সেগুলি হল হাই ডিমান্ড, পিক টাইম এবং সারচার্জ প্রাইস। মামলার আবেদনে তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য মোটর ভেহিকল আইন অনুসারে একটি নির্দিষ্ট ভাড়া চালু হোক। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, তারাও চাইছেন, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়ার মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে। গভীর রাতে ভাড়া বেশি হতেই পারে। কিন্তু ভাড়ার একটা নির্দিষ্ট কাঠামো থাকা উচিৎ।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল গুহ জানান, হলুদ ট্যাক্সির রিফিউজাল বন্ধ করতে শুভেন্দু অধিকারী এবং পরিবহণ দফতরের প্রধান সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন ট্যাক্সি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। আপাতত দু’টি নম্বর চালু করা হয়েছে,  যার একটি হল টোল ফ্রি ১৮০০-৩৪৫৫১৯২। অন্যটি হল হোয়াটস অ্যাপ নম্বর ৮৯০২০১৭১৯১। এই নম্বর দুটিতে প্রত্যাখ্যাত যাত্রীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রথমবার যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটলে তিন মাসের জন্য অভিযুক্ত চালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হবে। দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটলে ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে সেই চালকের লাইসেন্স। তৃতীয়বার একই ঘটনা ঘটলে সারা জীবনের জন্য বাতিল করা হবে লাইসেন্স।

Leave A Reply

Your email address will not be published.