আরবিআই-এর স্বশাসনের অধিকার খর্ব হচ্ছিল, তাই ইস্তফা, অবশেষে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) গভর্নর পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন উর্জিত প্যাটেল। যদিও সেই ইস্তফার পিছনে উঠে এসেছিল কেন্দ্রের সঙ্গে আরবিআই-এর সংঘাত ইস্যু। ডেপুটি গভর্নরের পদে থাকা বিরল আচার্যও উর্জিতের রাস্তা ধরে মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগেই পদত্যাগ করেছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছিল কেন পদ ছাড়লেন তাঁরা? জল্পনা তৈরি হয়েছিল কেন্দ্রের সঙ্গে মতের অমিল হওয়াতেই কি এই সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে বিরল আচার্য নিজে কী বললেন?
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত একটি অনলাইন আলোচনায় বিরল পরিষ্কার জানান, তাঁর, রঘুরাম রাজন, উর্জিত প্যাটেল এবং সিইএ বা মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে থাকা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের পদত্যাগ ছিল ‘মতবিরোধ সংক্রান্ত’ কারণে।
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দু’সপ্তাহ আগে আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দেন বিরল আচার্য। আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন প্রথম টার্ম শেষ করে ইস্তফা দেন। কিন্তু বিরল আচার্য ও উর্জিত প্যাটেল তাঁদের মেয়াদ শেষের ৬ মাস আগে পদত্যাগ করেছিলেন।
বিরল আচার্য মনে করেন, গত এক দশকে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে করতে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কাররা যে সব কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, তাতে ভালো কোনও ফল মেলেনি। আরবিআই-এর স্বাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর ফ্রাস্ট্রেশন এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, রাজন, প্যাটেলের মতো তিনিও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ইস্তফা দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন।
সরকারের সঙ্গে আরবিআই-এর মতানৈক্যের অন্যতম একটি বিষয় ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বশাসন। সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির সূচনা হয় বিরল আচার্যের বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে। বিরল জানিয়েছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা সম্ভাব্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে এক বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন চটজলদি সিদ্ধান্তকে টি-২০ ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন বিরল। বলেছিলেন, আরবিআই টেস্ট ম্যাচ খেলে। সবকটি সেশনে জেতা তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলেও সার্ভাইভ করাও শিখতে হয়। তাতে পরের সেশনে জয় পাওয়া যায়।
যদিও তাঁদের এই পদত্যাগ নিয়ে বিরল সংশ্লিষ্ট অনলাইন আলোচনায় জানান যে, পদত্যাগকে কোনও সমস্যা হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। বিরলের কথায়, আমার মতে পদত্যাগকে দেখা উচিত ভিন্নমত পোষণকারীর কণ্ঠস্বর হিসেবে। প্রকাশ্য বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়েই সঠিক রাস্তা বেরোয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাই আরবিআই-র মধ্যেও বিরুদ্ধ মত পোষণের জায়গা থাকা উচিত, মত প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের।

Comments are closed.