দেশে বেকারত্ব ছাড়ালো ২৭%, কর্মী নিয়োগ কমেছে ৬২%! প্রতি ৪ জনে ১ জন হারাচ্ছেন কাজ

লকডাউনের ভয়াবহ প্রভাব অর্থনীতিতে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রেকর্ড হারে বাড়ল বেকারত্ব। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী নিয়োগও পৌঁছেছে তলানিতে। ৩ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতে বেকারত্বের হার ২৭.১১ শতাংশ। জানাল, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (CMIE) সাম্প্রতিক রিপোর্ট।
এদিকে জব সাইট Naukri.com এর একটি রিপোর্ট বলছে, গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে কর্মী নিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোটেল, রেস্তঁরা, পর্যটন ক্ষেত্র, বিমান সংস্থাগুলি। সেখানে ৯১ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে কর্মী নিয়োগ। খারাপ অবস্থা অটোমোবাইল, খুচরো, অ্যাকাউন্টিং এবং ফিনান্সের ক্ষেত্রেও।

 

CMIE এর রিপোর্ট  

সম্প্রতি CMIE-এর রিপোর্ট জানিয়েছে, ১৫ মার্চ থেকে ৩ মের মধ্যে দেশের বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ২৭.১১ শতাংশে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি, ২৯.২২ শতাংশ। কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী থাকায় শহরের অধিকাংশই রেড জোন। গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার ২১.৪৫ শতাংশ। CMIE-এর রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৪ শতাংশ। এপ্রিলে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৩.৫২ শতাংশ।
ভারতে করোনার প্রকোপ পড়ার আগেও অর্থনীতি খুব একটা ভালো জায়গায় ছিল না। সে সময় বেকারত্বের হার ছিল ৭ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু করোনার প্রভাবে একপ্রকার কোমরই ভেঙে গিয়েছে অর্থনীতির। মাত্র ২ মাসের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে! অর্থাৎ, লকডাউনের পর দেশে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ। CMIE-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৪ শতাংশ। এপ্রিলে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৩.৫২ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে রেড জোন বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গিয়েছে। CMIE-এর রিপোর্ট বলছে, দেশের শহরগুলির বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ২৯.২২ শতাংশে এবং গ্রামাঞ্চলে ২৬.১৬ শতাংশ। ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত, শেষ সপ্তাহে শহরাঞ্চলে এই হার ছিল ২১.৪৫ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ২০.৮৮ শতাংশ। রাজ্য ভিত্তিক বেকারত্বের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা গিয়েছে পুদুচেরির বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ, ৭৫.৮ শতাংশ। তামিলনাড়ুর বেকারত্বের হার ৪৯.৮ শতাংশ। ঝাড়খণ্ড, বিহার, মহারাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪৭.১ শতাংশ, ৪৬.৬ শতাংশ এবং ২০.৯ শতাংশ।
দেশের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন বলে জানাচ্ছে এই রিপোর্ট। যেমন, এপ্রিলের শেষে হিমাচলপ্রদেশের বেকারত্বের হার হয়েছে ২.২ শতাংশ, সিকিমে ২.৩ শতাংশ এবং উত্তরাখণ্ডে এই হার ৬.৫ শতাংশ বলে জানাচ্ছে সিএমআইই।

 

Naukri.com এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট 

এই রিপোর্ট বলছে, গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে কর্মী নিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ। ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে হোটেল, রেস্তঁরা, পর্যটন ক্ষেত্র এবং বিমান সংস্থাগুলিতে। সেখানে ৯১ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে কর্মী নিয়োগ। তথৈবচ অবস্থা অটোমোবাইল, খুচরো, অ্যাকাউন্টিং এবং ফিনান্স ক্ষেত্রেও।
৫১ শতাংশ পর্যন্ত কর্মী নিয়োগ কমেছে আইট-সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে।
Naukri.com এর সমীক্ষা বলছে, নিয়োগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে এন্ট্রি লেভেলের কর্মীদের উপর। তারপরে ৪ থেকে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীরা প্রভাবিত হয়েছেন। মাঝারি এবং সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের অফিসারদের নিয়োগেও ক্ষেত্রেও এই প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। গত বছরের তুলনায়, ১৬ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের নিয়োগ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, প্রায় সব শহরেই কর্মী নিয়োগ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে এই সমীক্ষা।

Comments are closed.