পেট্রোপণ্য এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রের লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে অশান্ত ফ্রান্স। ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনের জেরে ছেদ পড়েছে ফ্রান্সের স্বাভাবিক জীবনে। প্রতিবাদকারীরা প্যারিস শহরে ফরাসি গণতন্ত্রের প্রতীক মারিয়ানে মনুমেন্ট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ্বলছে। বন্ধ দোকানপাট। যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্রিন ট্যাক্সের বিরোধিতায়, সেই আন্দোলনকারীদের এখন একটাই স্লোগান, ‘মাঁকর রিজাইন’। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাঁকরের পদত্যাগ দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। চাইছেন সংসদ ভেঙে দেওয়া হোক। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে স্কুল পড়ুয়ারাও।
কিন্তু ফ্রান্সের এই নজিরবিহীন আন্দোলনকে কেন বলা হচ্ছে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ মুভমেন্ট? আসলে আন্দোলনকারীরা ইয়েলো ভেস্ট বা হলুদ গেঞ্জি পরছেন রূপক অর্থে। ২০০৮ সাল থেকে ফ্রান্সে আইন অনুযায়ী যে কোনও মোটর গাড়ি চালককে গাঢ় হলুদ রঙের গেঞ্জি পরতে হয়, যাতে গাড়ি চালককে সহজে চিহ্নিত করা যায়। ফ্রান্সের বিক্ষোভকারীরা এই হলুদ গেঞ্জিই বেছে নিয়েছেন আন্দোলনে নামার পোশাক হিসেবে। কারণ, পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পরিবহণ কর্মীরা। বামপন্থী দলগুলির নেতৃত্বে তাঁরাই শুরু করেছিলেন এই আন্দোলন। তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে সাধারণ মানুষও হলুদ গেঞ্জি পরেই রাস্তায় নেমেছেন, যাতে গাড়ির জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে চিহ্নিত করা যায় চালকদের পোশাকের রঙ দেখে।
দেশের বেশিরভাগ সাধারণ নাগরিক ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। ফ্রান্সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে। তবে অনেকেই আন্দোলনের এই হিংস্রতা ও ভয়াবহতাকে সমর্থন করছেন না।
ফরাসি সংবিধানে এমন কোনও আইন নেই যাতে জোরপূর্বক দেশের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়। তাই প্রেসিডেন্টের ইচ্ছে ছাড়া তাঁকে পদ থেকে সরাতে জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২২ সালের নির্বাচন পর্যন্ত। যদিও, বর্তমান পরিস্থিতিতে যথেষ্টই চাপে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাঁকর। বর্তমান ‘ইয়োলো ভেস্ট’ মুভমেন্টকে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম তুলনা করছে ১৯৬৮ সালে প্যারিসের চ্যাম্প-ইলিসেস ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে। যেখানে প্রবল আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্ল দ্য গল বাধ্য হয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের দাবি মানতে এবং পরে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেন গল।
আন্দোলনের জেরে এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৮০০ মানুষ। বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জি ২০ মিটিং ছেড়ে তড়িঘড়ি দেশে ফিরেছেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা শুরু হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনাতেও বসছে ফরাসি সরকার। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
Comments are closed.