Actor Turned Politician: বড় পর্দা থেকে রাজনীতি, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কে কতটা সফল, আসুন দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে
অভিনয় জগতের লাইম লাইট থেকে সরে এসে রাজনীতি। সেখানেও সমান সফল হয়েছেন অনেকে। আবার অভিনেতা থেকে নেতা হতে গিয়ে অনেকেই ভোট রাজনীতিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছেন সেই আগের জগতেই। এমনই কয়েকজন actor turned politician এর কাহিনি নিয়ে এই প্রতিবেদন।
অনেকেই বলেন, অভিনেতাদের নেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল। কারণ, একটি রাজনৈতিক দলের উপর বিশ্বাস, যোগাযোগ থেকে প্রভাব পড়তে পারে অভিনয় জগতের কেরিয়ার গ্রাফে। আবার কেউ কেউ বলেন, অভিনয় জগত থেকে রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত অনেকে তখনই নেন, যখন অভিনয়ের কেরিয়ার গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। তাই প্রচারের আলোয় থাকা অভ্যস্ত সেলেব্রিটি অভিনেতা তখন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। যদিও এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। ভারতের রাজনীতিতে বলিউড, টলিউড থেকে এমন অনেক অভিনেতা আছেন যাঁরা কেরিয়ারের মধ্যগগনে থেকেও রাজনীতিতেও সমান সফল হয়েছেন। এমন অভিনেতা থেকে সফল নেতাদের (actor politician) কয়েকজনের তালিকা থাকল।
অভিনেতা থেকে নেতা (Actor Turned Politician)
এম জি রামচন্দ্রন
দর্শক মহলে প্রবল জনপ্রিয় অভিনেতা থেকে রাজনীতির আঙিনায় এসে সফল হয়ে যিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এম জি রামচন্দ্রন বা এম জি আর। তামিল অভিনয় জগতের সুপারস্টার থেকে তামিল ভূমিতে ‘মাক্কাল থিলাঙ্গম’ বা জনতার রাজা হিসেবে দাগ কাটতে পেরেছিলেন চল্লিশ, পঞ্চাশের দশকে প্রবল জনপ্রিয় অভিনেতা এম জি আর। সেলেবের তকমা থেকে নেমে এসে তামিলনাড়ুতে মোট দশ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন তিনি। কংগ্রেসের সুষ্ঠু রাজনৈতিক নিরাপত্তা ছেড়ে ১৯৫৩ সালে যোগ দেন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম (ডিএমকে) দলে। সেখান থেকে আবার প্রতিষ্ঠা করেছেন এআইডিএমকে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল, দীর্ঘ ১০ বছর তামিলনাড়ু শাসন করেছেন তিনি।
অমিতাভ বচ্চন
বলিউডের তিনি পরিচিত ‘বিগ বি’ নামে। বলিউডের শাহেনশাহ বড় পর্দাকে বিদায় না জানিয়েও ১৯৮৪ সালে রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন অমিতাভ। কংগ্রেসের টিকিটে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতে ‘৮৪-র লোকসভা নির্বাচনে এলাহাবাদ কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন অমিতাভ। কিন্তু বোফর্স কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় বলিউডের মেগাস্টারের। এর পরই প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেন তিনি। কিন্তু একবার ভোটে জিতে তিনি এখনও একটি রেকর্ড ধরে রেখেছেন যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুণা থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতা মুরলী মনোহর জোশী, রাজনীতির জগতে পরাক্রমী নেতারা প্রত্যেকেই এলাহাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়েছেন। কিন্তু বচ্চনের মতো কেউ ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ভোটের এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেননি।
সুনীল দত্ত
অভিনয় জগতের দাপুটে অভিনেতা থেকে রাজনীতিতেও তাঁর দাপট ছিল সমান। ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে লড়ে মুম্বইয়ের সাংসদ হন সুনীল দত্ত। ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণে ছেলে সঞ্জয় দত্তের নাম জড়ানো এবং তার জেরে জেলযাত্রাই বাবা সুনীল দত্তের রাজনীতির কেরিয়ার গ্রাফে বড় বাধা হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। সঞ্জয় দত্তও অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতে সামান্য সময়ের জন্য এলেও বাবার মতো দাগ কাটতে পারেননি রাজনীতির ময়দানে।
শত্রুঘ্ন সিনহা
বলিউডের অ্যাংরি ইয়ংম্যান আবার লোকসভা ও রাজ্যসভা, সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য থেকেছেন। প্রথম মোদী সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে অভিনয় জগৎ থেকে রাজনীতির ময়দানে এসে সফল হওয়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া, কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে বৈতরণী পার হতে না পেরে রাজনীতির আলো থেকে এখন অনেকটাই পিছনে চলে গিয়েছেন।
গোবিন্দা
নয়ের দশকে কমেডি ও নাচে হিন্দি ছবির দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন গোবিন্দা। কিন্তু ২০০০ সালের পর কেরিয়ার গ্রাফে ভাটা পড়ে, সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিতে যোগ দেবেন। ২০০৪ সালে মুম্বই থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে সাংসদও হন। কিন্তু বছর চারেক পরেই বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যে গোবিন্দা সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি ছেড়ে নিজের পুরনো জগতেই ফিরে যাবেন। ২০০৮ সালে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে নিলেও বলিউডে তাঁর কামব্যাক আর বিশেষ সফল হয়নি।
রাজেশ খান্না
সাতের দশকের বলিউড সুপারস্টার রাজেশ খান্নার রাজনীতি যাত্রাও ছিল ঝকঝকে। অভিনয়ের জগত থেকে ক্রমশ ব্যর্থ হতে থাকা রাজেশ খান্না ১৯৯২ সালে কংগ্রেসের টিকিটে নিউ দিল্লি থেকে সাংসদ হন। ১৯৯৬ সালে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বলিউডে একচ্ছত্র আধিপত্য করার পর শেষের দিকে যেমন নিজেকে সে ভাবে মেলে ধরতে পারেননি, রাজনীতির ক্ষেত্রে শুরুটা ভালো হলেও পরে ব্যর্থ হন বলিউডের এভারগ্রিন হিরো। জীবনের শেষ দিকটা প্রচণ্ড একাকিত্বে ভুগেই চলে যান রাজেশ খান্না।
সানি দেওল
বলিউডের আর এক অ্যাংরি ইয়ংম্যানের রাজনীতিতে আসাটা বলিউড থেকে প্রায় সরে যাওয়ার পরেই। ঘাতক, ঘায়েল, গদর ইত্যাদি একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে আসা সানি দেওল ঘায়েল ২ দিয়ে বলিউডে ফেরার চেষ্টা করেও একরকম ব্যর্থ হন। ২০১৯ সালে ধর্মেন্দ্র-পুত্র রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পঞ্জাবের গুরুদাসপুর কেন্দ্রে বিজেপি সাংসদ তথা বলিউডের আর এক বিখ্যাত অভিনেতা বিনোদ খান্নার মৃত্যুর কারণে সেখান থেকে সানিকে ভোটের টিকিট দেয় বিজেপি। ভোটে জেতার জন্য খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি সানি দেওলকে। এখন তিনি বিজেপি সাংসদ।
তাপস পাল
টলিউড থেকে যে actor politician’রা রাজনীতির জগতে সমান সফল হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম তাপস পাল। তৃণমূলের টিকিটে দু’বার বিধায়ক থেকে মমতা ব্যানার্জির বিশেষ আস্থাভাজন তাপস রাজ্যের পরিবর্তনের হাওয়ায় কৃষ্ণনগর থেকে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে সাংসদ হন। কিন্তু রোজভ্যালি চিট ফান্ড মামলায় নাম জড়ানো, সেখান থেকে সিবিআইর হাতে গ্রেফতার হওয়া, নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাপসের রাজনৈতিক কেরিয়ার বাধা পায়। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
দেব
টলিউডে সাফল্যের মধ্য গগনে থেকে ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে টলিউডের স্টার দেব ওরফে দীপক অধিকারীর ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত অনেককেই চমকে দিয়েছিল। কেউ বলেছিল, কেরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেবের রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ভুল। এর ফল তাঁকে বক্স অফিসে দিতে হবে। কিন্তু সমালোচকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে ২০১৯ সালে ফের সাংসদ নির্বাচিত হন দেব। সেই সঙ্গে শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, সিনেমার প্রযোজক হিসেবেও নিজের কাজের পরিধি বাড়িয়ে ফেলেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির রাস্তায় না গিয়ে অভিনয় জগতে স্ট্রাগলের পথ বেছে নেওয়া দেব।
অভিনেতা থেকে নেতা হওয়ার এই লিস্টে বর্তমানে যে দুটি নাম না নিলেই নয়, তাঁরা হলেন কমল হাসান ও রজনীকান্ত। দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার থেকে রাজনীতিতেও এই দু’জন সমান জনপ্রিয় হলেও এখনও সংসদীয় রাজনীতিতে সফল হননি।
অভিনেত্রী থেকে জননেত্রী (Actress Turned Politician)
জয়ললিতা
তামিলনাড়ুর আইকন হিসেবে বিবেচিত হন জয়ললিতা। গরিব পরিবার থেকে সিনে দুনিয়া, সেখান থেকে রাজনীতির ময়দানে এসে ছ’বার, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা জয়ললিতার রাজনীতি যাত্রা তামিলনাড়ুর রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সাল, মৃত্যু পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে থাকা জয়ললিতার রাজনৈতিক সাফল্যের পিছনে এআইডিএমকে নেতা ও তাঁর রাজনৈতিক গুরু এম জি আর- এর ভূমিকা বিরাট বড় বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
হেমা মালিনী
বলিউডের ড্রিম গার্ল থেকে মথুরার বিজেপি সাংসদ দুটি জায়গায়তেই সমান সফল ধর্মেন্দ্র-জায়া। তিনিও সংসদের দুই কক্ষে বিজেপির সদস্য হয়েছেন। বর্তমানে মথুরা কেন্দ্র থেকে তিনি বিজেপির সাংসদের পদে রয়েছেন।
স্মৃতি ইরানী
একতা কাপুরের সিরিয়াল ‘কিঁউকি সাঁস ভি কভি বহু থি’-র প্রবল জনপ্রিয় টেলি তারকা থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে লোকসভা ভোটে লড়াই এবং দু’দফায় মোদী সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদে থাকা স্মৃতি ইরানীর রাজনৈতিক লড়াই বেশ ঝকঝকে। প্রথমবার গুজরাত থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন, এবার উত্তরপ্রদেশে গান্ধীদের গড়ে ভাঙন ধরিয়ে লোকসভা ভোটে জিতে বাজিমাত করেছেন স্মৃতি ইরানী। এখন মোদী মন্ত্রিসভায় সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রীর পদে রয়েছেন স্মৃতি ইরানী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে স্মৃতি আমেথিতে রাহুলকে হারিয়ে জায়ান্ট কিলার হন।
শতাব্দী রায়
অভিনয় জগতের মতোই রাজনীতিতেও খানিকটা তিনি যেন ‘আন্ডাররেটেড’। তপন সিনহার মতো পরিচালকের হাত ধরে বাংলা অভিনয় জগতে প্রবেশ করে প্রচুর বাণিজ্যিক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন শতাব্দী। তিনিও বন্ধু তাপস পালের মতো তৃণমূলে গিয়ে পরপর সাফল্য পেয়েছেন। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯, তিনবার লোকসভা ভোটে বীরভূম থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন। ২০১৪ সালে নারী কল্যাণ ও ন্যায় বিচার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যও হন।
নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় যে দুই মহিলা প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি, তাঁরা হলেন নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী। বসিরহাট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে সহজে জয় এনে দেওয়া নুসরত জাহান এখন তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্যা। একইরকম ভাবে নির্বাচনী প্রচারে বিচ্ছিন্ন বিতর্কের মধ্যেও যাদবপুর কেন্দ্রে হেভিওয়েট বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কিংবা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়া অনুপম হাজরাকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে মমতার মুখরক্ষা করেছেন মিমি।
এই তালিকার বাইরে জয়া প্রদা, নাগমা, খুশবু, উর্মিলা, মৌসুমী চ্যাটার্জি, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেনের মতো প্রচুর অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা কেউ অভিনয়ের লাইম লাইট থেকে রাজনীতিতে এসে অল্প সময়ের জন্য সফল হয়ে ফের আগের কাজেই ফিরে গিয়েছেন, কেউ ব্যর্থ হয়ে রাজনীতি, অভিনয় দুটোকেই বিদায় জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ এখনও দাঁতে দাঁত চেপে রাজনীতির ময়দানে সফল হওয়ার লড়াই জারি রেখেছেন।
Comments are closed.