হার্ভার্ড স্নাতক জ্যোতিরাদিত্য ঝড়ে বেসামাল মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সরকার থেকে রাহুল-সোনিয়া! জানতেন তাঁর সম্পর্কে এই সমস্ত তথ্য
২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। উত্তরপ্রদেশে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল কংগ্রেস সাংসদ তথা নেতা মাধবরাও সিন্ধিয়ার। মধ্যপ্রদেশের গুনার সাংসদ মাধবরাওয়ের মৃত্যুতে তৈরি হওয়া শূন্যস্থান পূরণ করলেন আরেক সিন্ধিয়া। তিনি জ্যোতিরাদিত্য। তরুণ তুর্কি জ্যোতিরাদিত্য জীবনে প্রথমবার ভোটে দাঁড়ালেন বাবার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গুনাতে। আর ভোটে দাঁড়িয়েই বাজিমাত। বিজেপি প্রার্থীকে হারালেন সাড়ে ৪ লক্ষ ভোটে। সেই যে জয়ের স্বাদ এসে লাগল, তা চলল দুই দশক। ২০১৯ সালের লোকসভায় প্রথমবার হারের মুখ দেখলেন মাধবরাও পুত্র। তারপর থেকেই সঙ্কটের শুরুবাদ।
১৯৭১ সালের পয়লা জানুয়ারি জন্ম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার। বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া, মা মাধবী রাজে সিন্ধিয়া। দুন স্কুল থেকে পাশ করে জ্যোতিরাদিত্য চলে যান হার্ভার্ড। সেখানে প্রথমে স্নাতক তারপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। এরপর স্ট্যানফোর্ড থেকে এমবিএও করেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। পড়া শেষে দেশে ফেরেন। তারপরই প্লেন ক্র্যাশে অকাল মৃত্যু দাপুটে কংগ্রেস নেতা মাধবরাও সিন্ধিয়ার। বাবার অবর্তমানে বাবার সাংসদ ক্ষেত্র গুনা থেকেই কংগ্রেসের প্রতীকে প্রথমবার ভোটে জেতেন ছেলে জ্যোতিরাদিত্য। কংগ্রেসের সঙ্গে সেই সম্পর্কের ইতি মঙ্গলবার।
সিন্ধিয়া পরিবারের রাজনীতিতে প্রবেশ
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দিদা, গোয়ালিয়রের রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়া রাজনীতিতে প্রবেশ করেন কংগ্রেসের হাত ধরে। ১৯৫৭ সালে গুনা কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদে পৌঁছন বিজয়রাজে। ১০ বছর কংগ্রেসে থাকার পর বিজয়রাজে দলবদল করেন। বিজেপি তখন ছিল না, কিন্তু ছিল জনসঙ্ঘ। ১৯৬৭ সালে জনসঙ্ঘে যোগ দেন বিজয়রাজে সিন্ধিয়া।
১৯৭১ সালে দেশজুড়ে প্রবল ইন্দিরা হাওয়া। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে সিন্ধিয়া দুর্গে তা আঘাত হানতে পারল না। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, ৩ টি আসনেই জয় পেয়েছেন জনসঙ্ঘের প্রার্থীরা। সেবার বিজয়রাজে সিন্ধিয়া ভিন্ড থেকে, অটলবিহারী বাজপেয়ী গোয়ালিয়র থেকে এবং জ্যোতিরাদিত্যর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া গুনা থেকে জেতেন। মাধবরাওয়ের বয়স তখন মাত্র ২৬। কিন্তু এরপরই কাহানি মে ট্যুইস্ট। জরুরি অবস্থান অবসানে ১৯৭৭ সালে মাধবরাও জনসঙ্ঘ ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন মাধবরাও। কংগ্রেসে সেই শুরু সিন্ধিয়া-রাজের। ১৯৮০ সালে কংগ্রেসের প্রতীকে ভোটে লড়েন মাধবরাও। ভোটে জেতাই শুধু নয়, কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারে মন্ত্রীও হন তিনি। জীবদ্দশায় অবশ্য আর দল বদল করেননি মাধবরাও। ২০০১ সালে বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতিতে প্রবেশ ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার।
অন্যদিকে জ্যোতিরাদিত্যর দুই পিসি বরাবরই বিজেপির সঙ্গে। এক পিসি বসুন্ধরারাজে সিন্ধিয়া রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অবধি হয়েছিলেন। আরেক পিসি যশোধরা রাজে সিন্ধিয়াও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেত্রী। এমনকী শিবরাজ সিংহ চৌহানের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন।
বরাবরই বিজেপি ঘনিষ্ঠ সিন্ধিয়া রাজ পরিবারে মাধবরাও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই আসন থেকেই কংগ্রেসেরই প্রতীকে বিপুল ভোটে জেতেন ছেলে জ্যোতিরাদিত্য। সেই ছেলেই বাবার জন্মদিবসে যোগ দিলেন বাবারই পুরনো দল বিজেপিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল সিন্ধিয়া রাজ পরিবারের।
Comments are closed.