গোটা বিশ্বে হাহাকার ফেলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। মৃত্যু হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। কার্যত তালা পড়ে গিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। নতুন লগ্নি তো দূর অস্ত, মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়াই। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে রক্তচাপ বাড়তে বাধ্য।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিজস্ব সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (ILO) তাদের ‘COVID- 19 and world of work: Impacts and responses’ শীর্ষক রিপোর্টে জানিয়েছে, করোনা অতিমারির জেরে ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে অর্থনীতি। গোটা বিশ্বে কাজ হারাতে পারেন অন্তত আড়াই কোটি মানুষ। কমতে পারে বেতন। বাড়তে পারে কাজের চাপ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার দাওয়াইও বাতলে দিয়েছে ILO। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিকস্তরে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। তাতে ক্ষতি এড়ানো না গেলেও অন্তত তাকে বহরে কমানো যাবে।
মোকাবিলার পথ কী?
ILO বলছে এজন্য প্রয়োজন ত্রিফলা নীতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সুরক্ষা দিতে হবে, অর্থনীতি, বিশেষ করে চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতে হবে এবং চাকরি ও রোজগারের নিশ্চয়তা দিতে হবে রাষ্ট্রকে।
কীভাবে তা সম্ভব তাও আছে রিপোর্টে। আইএলওর রিপোর্টের ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রকে সামাজিক সুরক্ষার আওতা আরও বাড়াতে হবে। সংস্থাগুলোকে কর্মীদের স্বল্প সময়ের কাজ, পেইড লিভ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতেই হবে। পাশাপাশি, কর্মীস্বার্থ মাথায় রেখে রাজস্ব এবং আর্থিক নীতি প্রণয়নের পথে যেতে হবে। কর্মীরা যাতে ঋণ নিতে বা মেটাতে সমস্যায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
২০০৮-০৯ সালে বিশ্বমন্দার সময় বিপুল কর্মহীন সমস্যা মোকাবিলায় যেভাবে আন্তর্জাতিকস্তরে সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি নীতি তৈরি করে তা প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই কথা মনে করিয়ে আইএলও বলছে, করোনা সমস্যা মোকাবিলায় সেই একই পথ নিতে হবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তাছাড়া বাঁচার উপায় নেই।
কিন্তু এখনও করোনায় ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে মাপার সময় আসেনি। সেক্ষেত্রে আইএলও সবচেয়ে খারাপ এবং তুলনামূলকভাবে ভালো, এই দুই পৃথক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়েছে। জিডিপির উপর নির্ভর করে তৈরি করা আইএলওর রিপোর্ট বলছে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে ২৪.৭ মিলিয়ন বা আড়াই কোটির সামান্য কম এবং তুলনামূলকভাবে ভালো পরিস্থিতিতে চাকরি হারাতে পারেন ৫৩ লক্ষ মানুষ। ২০১৯ সালে গোটা পৃথিবীতে চাকুরিজীবীর সংখ্যা ১৮৮ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি ৮০ লক্ষ।
২০০৮-০৯ সালে বিশ্বমন্দার সময় বেকার হয়েছিলেন ২ কোটিরও বেশি মানুষ।
তবে শুধু বেকারত্বই নয়, করোনা থাবার পিছু পিছু আসতে পারে বেতন কমানোর ঘটনাও। আইএলওর রিপোর্টে লেখা আছে, গোটা বিশ্বে ৮৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম আয় করবেন কর্মীরা। এবার এই আয় কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাজারে।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে গোটা দুনিয়ায় গরিবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর বিশ্বে গরিবের সংখ্যা অন্তত আরও সাড়ে ৩ কোটি বেড়ে যাবে, বলছে রিপোর্ট। পাল্লা দিয়ে সমাজে বাড়বে বৈষম্য।
সেই পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা ভেবে সময় থাকতেই দেশগুলোকে মাঠে নামার কথা বলেছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্বে ইতিমধ্যেই এগারো হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতেও শতাধিক করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। করোনা আতঙ্কে শঙ্কিত পৃথিবীজুড়ে চলছে এক অভূতপূর্ব অচলাবস্থা।
Comments are closed.