রাজনীতির ময়দানে তাঁরা প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে একে অন্যের পাশে। তাই করোনা সংক্রমিত তৃণমূল নেতার জন্য প্লাজমা দান করতে সোজা হাসপাতালে চলে গেলেন সিপিএম নেতা। রাজ্য রাজনীতিতে আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের মধ্যেও এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া।
কয়েকদিন আগে কোভিড হয় হাবড়ার পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা নীলিমেশ দাসের। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। তৃণমূল নেতার প্লাজমা থেরাপি শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। আর সেই খবর পেয়ে সোমবার সোজা ওই হাসপাতালে পৌঁছে যান পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাস। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু জটিলতার কারণে চিকিৎসকেরা প্লাজমা না নিলেও সিপিএম নেতার এই মানবিক উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁর দল থেকে শাসক শিবির।
অসুস্থ নীলিমেশ দাসও এই ঘটনার কথা জানতে পেরে বলেন, এটাই হল হাবড়ার আসল স্পিরিট এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
আর সিপিএম নেতা ঋজিনন্দনের কথায়, বিমান বসুর বক্তব্যে শুনেছি, আগে আমরা মানুষ। তারপরে কমিউনিস্ট। তৃণমূলের সমালোচনা আমরা অবশ্যই করব। মতপার্থক্যও থাকবে। কিন্তু সবার আগে তো মানুষের জীবনের মূল্য। বিরোধী দলের কারও বিপদে এগিয়ে যাওয়া যাবে না, এমন অন্ধত্ব আমাদের দলে নেই, দাবি ঋজিনন্দনের।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতাকে প্লাজমা দানের জন্য বেশ কয়েকজন হাবড়া থেকে কলকাতা গিয়েছিলেন। তবে ঋজিনন্দনের প্লাজমা না নেওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, করোনা রোগীকে প্লাজমা দিতে হলে দাতাকেও করোনা পজিটিভ হতে হয়। গত ১৩ অগাস্ট র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ঋজিনন্দনের করোনা ধরা পড়ে। কিন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁর লালারস পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েনি। তাই তাঁর প্লাজমা কোনও করোনা রোগীকে দান করা যাবে না।
অতীতে সিপিএম-তৃণমূলের একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছে এই হাবড়া। বাম ও তৃণমূল, দু’তরফেরই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বিশাল। সিপিএমের অভিযোগ, ২০১৩ সালের হাবড়া পুরসভা ভোট হোক বা গত পঞ্চায়েত ভোট, তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। এমনকী বিরোধী প্রার্থীদেরও হুমকি দেওয়া হয়। হাবড়ার স্থানীয় কলেজগুলিতে দুই দলের ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষের খবরও বহুবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। আবার রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম পুরভোট, বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস করেছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। এসব রাজনৈতিক দলাদলির মধ্যেও তৃণমূল নেতার অসুস্থতার খবরে সিপিএম নেতার হাসপাতালে হাজির হওয়া এবং তাঁকে সাহায্য করার নিদর্শন বর্তমানে খুব কম দেখা গিয়েছে। তাই সিপিএমের ঋজিনন্দনের প্লাজমা হয়ত তৃণমূল নেতা নীলিমেশের শরীরে ব্যবহার করা গেল না, কিন্তু যে সৌজন্য ও উদারতার উদাহরণ তৈরি হল, সেটাও অমূল্য, জানাচ্ছে হাবড়া।
Comments are closed.