পিকের কাজকর্মে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ক্ষুব্ধ কেন?

বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, তৎপরতা বাড়ছে সব শিবিরেই। প্রচারের পাশাপাশি দলীয় সংগঠন আরও পোক্ত করতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। 

এদিকে লোকসভায় খারাপ ফলের পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ভোট বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে এসেছে। তারপর থেকে গ্রাউন্ড রিয়ালিটি বুঝতে রাজ্যের কোণে কোণে ঘুরছে পিকের টিম।

এবার সেই পিকেকে নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তৃণমূলের কিছু নেতা। কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী যেমন ফেসবুকে পোস্ট করেছেন নিজের অসন্তোষ। সেখানে মিহিরবাবু সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, দলের রাশ কি আদৌ মমতা ব্যানার্জির হাতে আছে, নাকি বকলমে তৃণমূল চালাচ্ছেন অন্য কেউ? রাজনৈতিক মহল বলছে, মিহির গোস্বামী নাম না করে আসলে পিকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করলেন। 

মিহির একা নন, সোমবারই মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন তৃণমূল নেতা একই ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাহলে কি পিকেকে এনে হিতে বিপরীত হচ্ছে? কী মনোভাব তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের? 

লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী বাংলায় ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১২২ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর তৃণমূল এগিয়ে ১৬৩ টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে ৯ টি আসনে। 

পিকের কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ছাড়া বিজেপিকে আটকানো। এই অবস্থায় দলেরই কিছু নেতার পিকেকে নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ কতটা চাপে ফেলছে শীর্ষ নেতৃত্বকে?

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা মনে করছেন, পিকেকে নিয়ে অসন্তোষ আসলে এক অন্য ইঙ্গিত। তাঁর মতে পিকের ভূমিকা পরামর্শদাতার। দলের রাশ যার হাতে থাকার, তাঁর হাতেই আছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। পিকের টিম তৃণমূলের সংগঠনের সমান্তরালভাবে কাজ করে। ওই নেতার কথায়, আর এটাই কিছু নেতার অসন্তোষের মূল কারণ। তিনি বলছেন, কারা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন দেখুন। দেখতে পাবেন লোকসভায় বহু ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। লড়াই দেওয়ার মতো জায়গায় তাঁরা নেই।

রাজ্যের কোন জেলাতে কোন নেতা কেমন কাজ করছেন, লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তা জানার জন্য বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবনকে ভরসা করতে হোত সেই জেলার সংগঠনের রিপোর্টের উপর। কিন্তু লোকসভার পর থেকে সংগঠনের পাশাপাশি পিকের টিম সমান্তরালভাবে এই এক কাজ করে গিয়েছে। ফলে ঘাসফুল নেতৃত্ব এখন দুটি করে রিপোর্ট পাচ্ছেন। তার সুবিধে হল, দুটি রিপোর্ট পাশাপাশি রাখলেই ধরা পড়ে যাবে কোনও নেতা প্রকৃতপক্ষে কেমন কাজ করছেন। 

তৃণমূলের এক নেতার মতে অসন্তোষ প্রকাশ করা বিধায়করা একটা ব্যাপার বুঝে গেছেন, ২০২১ সালে টিকিট পাওয়া অনিশ্চিত। আর এই অনিশ্চয়তার কারণ সম্পর্কে যে শীর্ষ নেতৃত্ব ওয়াকিবহাল তাও বুঝতে পারছেন। তাই তাঁদের পিকের বিরুদ্ধে গালমন্দ না করে উপায়ই বা কী! 

ওই নেতা বলছেন, পিকে পুরোপুরি কর্পোরেট কায়দায় রাজ্যজুড়ে কাজ করছেন। আর আমরা তাঁর দেওয়া পরামর্শ গ্রহণ করছি। তাঁর কথায়, একজন নেতার একমাত্র ইউএসপি হল মানুষ। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ বলছে এই মাপকাঠিতে অনেক তাবড় নেতা বিপদে পড়তে পারেন। তা আঁচ করে তাঁরা আগেভাগেই পিকে বিরোধিতায় নেমেছেন। সেই নেতার কোথায় এতে যত না পিকে বিরোধিতা তার চেয়েও বেশি রয়েছে টিকিট না পাওয়ার অনিশ্চয়তা। সেক্ষেত্রে তাঁরা বিজেপিকেও বাজিয়ে দেখছেন। তাই আপাতত পিকের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা নেতাদের পাত্তা দিতে নারাজ ঘাসফুল নেতৃত্ব।

Comments are closed.