শুভেন্দু জট কি কাটল? কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী-তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্ক? শুভেন্দু অধিকারী কি দলে থাকবেন, না দল ছাড়বেন? এই সমস্ত প্রশ্ন এবং জল্পনাই নয়া মাত্রা পেয়েছে মঙ্গলবার রাতে তাঁর সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জি সহ তৃণমূল নেতৃত্বের মিটিংয়ের পর।
কিন্তু বুধবার দুপুরে গোটা পর্বে নাটকীয় পরিবর্ত! সূত্রের খবর, এদিন দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায়কে শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনি যা করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক। এরপর আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়’। এর মানে কি শুভেন্দু অধিকারী এবার দল ছাড়বেন, তা তিনি দলের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারী সাংসদের কাছে স্পষ্ট করেননি। তবে মঙ্গলবার রাতের পর বরফ গলার যে কথা সৌগত রায় ঘোষণা করেছিলেন, তা নতুন করে জটিল আকার নিল বলেই মনে করছে দুই শিবির। সূত্রের খবর, সৌগত রায়ের ভূমিকায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে অত্যন্ত ভালো স্পিরিটে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক হয় তৃণমূল নেতৃত্বের। বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায় ছাড়াও ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর। বৈঠকে শুভেন্দু তাঁর বিভিন্ন ক্ষোভের কথা জানান। সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে অবিলম্বে তাঁকে নিয়ে দল নির্বাচনের প্রচারে নামতে চায় বলে শুভেন্দুকে জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশান্ত কিশোরও তাতে মত দেন বলেই খবর। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী এরপর জানান, তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন জেলার একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দল সম্প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুরের প্রণব বসু, হুগলির সমীরণ মিত্র, পুরুলিয়ার সৃষ্টিধর মাহাতো, মুর্শিদাবাদের মুশারফ হোসেন মধু প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে এবং তাঁর আরও কয়েকজন অনুগামীর সঙ্গে এই নিয়ে আগামী ৪ তারিখ কথা বলবেন, তারপর নিজের অবস্থান জানাবেন।
সূত্রের খবর, এরপর অভিষেক আগামী ৭ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর মেদিনীপুরের জনসভায় শুভেন্দুকে উপস্থিত থাকতে বলেন। শুভেন্দু বলেন, তিনি তাঁর অবস্থান তার আগেই দলকে জানাবেন। ঠিক হয়, শুভেন্দু অধিকারী নিজের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে ৪ তারিখ কলকাতায় মিটিং করবেন এবং ৬ তারিখ সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করবেন। এরপর মিটিং শেষ হয় মঙ্গলবার রাতে।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, মিটিং শেষ হওয়ার সময় ঠিক হয়েছিল, ৬ তারিখ তিনি প্রকাশ্য নিজের বক্তব্য জানাবেন। কিন্তু মিটিং শেষ হওয়া মাত্রই টেলিভিশন চ্যানেল মারফত সদ্য পদত্যাগী মন্ত্রী এবং নন্দীগ্রামের বিধায়ক জানতে পারেন সৌগত রায় বলেছেন, ‘সব মিটে গেছে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলেই থাকছেন।’
সূত্রের খবর, সৌগত রায়ের এই প্রকাশ্য বিবৃতিতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠদের প্রশ্ন, যেখানে তাঁর ৬ তারিখ প্রকাশ্যে বলার কথা চূড়ান্ত হয়েছিল, সেখানে সব মিটে গেছে বলে আগেভাগে কেন প্রকাশ্য বিবৃতি দিলেন মধ্যস্থতাকারী সাংসদ।
সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে শুভেন্দু অধিকারী সাংসদ সৌগত রায়কে জানিয়েছেন, আপনি যা করেছেন তা চূড়ান্ত অনৈতিক। এরপর আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। এই গোটা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও শুভেন্দু অধিকারীর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তৃণমূল শিবিরও শুভেন্দুর এই বার্তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিস্থিতি যেখানে ছিল, তার থেকেও সম্ভবত খারাপ জায়গায় চলে গেল তৃণমূল-শুভেন্দু সম্পর্ক। একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয় বলে শুভেন্দু কী বোঝাতে চেয়েছেন, তাও বুঝতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
Comments are closed.