৩ থেকে ৭৭ হয়েছে পার্টি। তাও কেন গেল গেল রব? একুশের বিধানসভায় গেরুয়া শিবিরের ফল নিয়ে এমনই ধোঁয়াশায় দেশ। ২ মে বিকেলে যে বিজেপি নেতাদের মুখে ছিল মানুষ নেয়নি বুলি, সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই তা বদলে হয়ে গিয়েছে ৩ থেকে ৭৭! ফলে বাংলায় আদৌ বিজেপির হার হয়েছে কিনা তা নিয়ে ধন্দে রাজনৈতিক মহল!
বহিরঙ্গে ৩ থেকে ৭৭ হওয়ার অদম্য ভাব বজায় রাখলেও, ভিতরে ভিতরে বাংলায় ভরাডুবির ময়নাতদন্ত শুরু করে দিয়েছেন শাহ-নাড্ডারা। তার প্রথম ধাপ হল, পদমর্যাদা অনুযায়ী কাজের কত শতাংশ সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছেন, তার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ। সূত্রের খবর, সেই বিশ্লেষণে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্য, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননের ফল বেশ খারাপ। মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রধান পর্যবেক্ষক হিসেবে পদ যেতে পারে কৈলাসের। অন্দরের খবর, কৈলাসের নেতৃত্বে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে তৃণমূল ভাঙ্গানোকে বাংলায় ভরাডুবির পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আরএসএস।
এখন প্রশ্ন হল, কৈলাসের পদ গেলে তাঁর জায়গায় আসবেন কে? এখানেই একটি টুইস্ট অপেক্ষা করছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। বিজেপির প্রাথমিক ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে, মমতা ব্যানার্জির পাল্টা কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ তুলে ধরতে পারেনি বিজেপি। তাতেই অর্ধেক লড়াই শেষ হয়ে যায় বলে মনে করেন বিজেপি নেতাদের একটি অংশ। একুশের বিপর্যয়ের পর তাই এই দিকে ফাঁক রাখতে চায় না মোদী-শাহের দল।
আর বাংলার এই বন্ধুর পথে অমিত শাহ, জে পি নাড্ডাদের নয়া বাজি স্মৃতি ইরানি। ঝরঝরে বাংলায় স্মৃতি গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। পদ মর্যাদায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বাংলার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ব্যক্তিগত জীবনেও স্মৃতি ইরানি বাংলা সংস্কৃতির কাছাকাছি অবস্থান করেন। বাংলায় স্মৃতির গ্রহণযোগ্যতা বাকি কেন্দ্রীয় নেতাদের চেয়ে বেশি তা দেখা গেছে বিধানসভার প্রচারে। তাই বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, মমতাকে টক্কর দেওয়ার জন্য স্মৃতি পারফেক্ট!
বিজেপির দিল্লির নেতারা মনে করছেন, শুধু ঘরে বসে ভার্চুয়াল ভাষণ নয়, স্মৃতি পথে নেমে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য আন্দোলন করতে সক্ষম হবেন। করোনা কমলেই মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে পথে নেমে পড়তে চায় বিজেপি। তাই শুধু দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীর উপর ভরসা না রেখে স্মৃতিকেও এগিয়ে দিতে চান শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনটাই বিজেপি সূত্রে খবর।
স্মৃতি ইরানিকে পর্যবেক্ষক পদ দেওয়া হবে কিনা তা জানা যায়নি। সেক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক অন্য কাউকে করে স্মৃতিকে বাংলায় পাঠাতে পারে দিল্লির নেতৃত্ব।
কিন্তু স্মৃতিকে আনার পিছনে আসল কারণ কী? রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ বলছে, প্রথমে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল স্মৃতি ইরানিকে। ঘরের মাঠে তৎকালীন কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে হারিয়েছিলেন বিজেপির জায়ান্ট কিলার স্মৃতি। বিজেপির একটি অংশের মত, উত্তরপ্রদেশে সেই প্রথম কংগ্রেস কাঁটা পুরোপুরি উপড়ে ফেলে বিজেপি। তারপর থেকে যোগী রাজ্যে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক কংগ্রেস। রাহুল-বিজয়ের পর এবার স্মৃতির সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ।
মমতা ব্যানার্জির পাল্টা মহিলা মুখ তুলে ধরার গেরুয়া প্রয়াস অবশ্য নতুন না। প্রথমে রূপা গাঙ্গুলি, তারপর লকেট চ্যাটার্জিকে দিয়ে চেষ্টা হয়েছিল। কাজে দেয়নি। তাই কৈলাসকে স্মৃতির পাতায় ঠেলে দিয়ে আরেক বাংলাভাষী মহিলাকে সামনে আনতে চায় বিজেপি।
বাংলায় নির্বাচনী ভরাডুবির পর স্মৃতি পারবেন কি বিজেপিকে শিরোনামে তুলে আনতে?
Comments are closed.