ছত্তিসগঢ়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর বনভূমি সাফ করে খনি তৈরির ছাড়পত্র আদানি গোষ্ঠীকে, কেন্দ্রের ভূমিকায় প্রশ্ন
সম্প্রতি অরণ্যবাসীদের বসবাসের অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলা মামলায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পরে অবশ্য রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু গোটা ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ কেন্দ্র অরণ্যবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে আগ্রহী কিনা তা নিয়ে। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই ফের আদিবাসী বিরোধী পদক্ষেপের অভিযোগ উঠল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। কাঠগড়ায় মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী আদানিরা।
ছত্তিসগঢ়ের হাসদেও আরান্ড বনাঞ্চলে কয়লা খনি গড়তে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেয়ে গেল আদানি গোষ্ঠী। যদিও অরণ্য সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে ২০০৯ সালে এই অঞ্চলে খনি কিংবা অন্য কোনও প্রকল্প তৈরিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল পরিবেশ মন্ত্রক।
১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত ছত্তিসগঢ়ের হাসদেও আরান্ড মধ্য ভারতের সবচেয়ে গভীর জঙ্গল। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ঠাঁসা এই বনভূমির ৩০ টি কয়লা ব্লকের একটি পারসা। এই পারসা খনি এতদিন ছিল রাজস্থান রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এখন থেকে বছরে ৫ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের ক্ষমতা সম্পন্ন এই খনি চালাবে আদানি গোষ্ঠীর রাজস্থান কোলিয়ারিস লিমিটেড। ফেব্রুয়ারিতেই এই সংক্রান্ত প্রথম দফার ছাড়পত্র পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
পারসার খোলামুখ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে গেলে প্রথমেই এলাকার সবুজ নিধন করতে হবে। তারপর মাটির আস্তরণ সম্পূর্ণ সরিয়ে কয়লা তোলার কাজ করতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ অরণ্য নিধন নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা। এ বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছাড়পত্র দেওয়ার আগে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের এক্সপার্ট অ্যাপ্রাইজাল কমিটির (ইএসি) কাছে এই প্রকল্প খতিয়ে দেখার আবেদন জমা পড়েছিল মোট তিনবার। কখনও রাজ্য আদিবাসী ওয়েলফেয়ার বিভাগের পাঠানো রিপোর্টে গ্রামসভার মতামতকে অগ্রাহ্য করার অভিযোগ ওঠে, আবার কখনও ওই এলাকা এলিফেন্ট করিডোরের মধ্যে হওয়ায় আপত্তি তুলেছিল রাজ্য বন্যপ্রাণী বিভাগ। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র কী করে পেল আদানি গোষ্ঠী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদরা।
২০ শে ফেব্রুয়ারি ছত্তিসগঢ় বাঁচাও আন্দোলনের তরফ থেকে ইএসসিকে পাঠানো চিঠিতে পরিবেশ ও আইনগত দিকগুলি উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, উত্তর ছত্তিসগঢ়ের সরগুজা জেলার দুটি গ্রামের মানুষের দাবি, গ্রাম সভার সম্মতি হিসেবে যে রিপোর্টকে তুলে ধরা হচ্ছে, তা আসলে ভুয়ো।
পরিবেশকর্মী এবং আইন বিশেষজ্ঞরা আরও একটি বিষয় তুলে ধরছেন। তা হল, হাসদেও আরান্ডের একেবারে পাশেই রয়েছে পারসা পূর্ব এবং কেটে বাসাও কয়লা খনি। এই দুটি খনির ছাড়পত্র দেওয়ার সময় মূল শর্তই ছিল, ছত্তিসগঢ় সরকার মূল হাসদেও আরান্ড এলাকায় প্রবেশের ছাড়পত্র দেবে না। যদিও আদানি গোষ্ঠী সদ্য ছাড়পত্র পেয়েছে যে খনি এলাকার, তা হাসদেও আরান্ডের একেবারে কোর এলাকার মধ্যেই অবস্থিত।
পরিবেশবিদদের অভিযোগ, খোলামুখ খনির কাজ শুরু হওয়ার অর্থ হল মধ্য ভারতের অবশিষ্ট বনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে গভীর জঙ্গলকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া। যা কেবল গাছপালাই নয়, জঙ্গল আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি একে একে নষ্ট করবে জীববৈচিত্র্য এবং জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরে অরণ্য ছেড়ে লোকালয়ে আনাগোনা বাড়বে বন্যপশুদের। যা ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
আদানি গোষ্ঠীর অবশ্য দাবি, একটি দায়িত্বশীল কর্পোরেট হিসেবে পরিবেশ ও আদিবাসীদের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ছত্তিসগঢ়ের মানুষের কাছে জীববৈচিত্র্য এবং বন্যপ্রাণ রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি মোদী ঘনিষ্ঠ এই সংস্থার।
Comments are closed.