খুন-পাল্টা খুনের পর সোমবারও উত্তপ্ত বসিরহাট, রাজ্যকে কড়া বার্তা কেন্দ্রের

ভোট পরবর্তী হিংসা, খুনোখুনি অব্যাহত বাংলায়।
শনিবার থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকা, যার জের চলে রবিবার সারা দিন।
শনিবার রাতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালির মিনাখাঁর ন্যাজাট। অভিযোগ, তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ এখানে প্রাণ হারিয়েছেন কম পক্ষে তিনজন। বিজেপি দাবি, তাদের দু’জন কর্মী খুন হয়েছেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, মৃতদের মধ্যে একজন তাঁদের সমর্থক। বিজেপির অভিযোগ, তাদের ৬ সমর্থক এখনও নিখোঁজ। তৃণমূলের পাল্টা দাবি তাদেরও তিন সমর্থকের খোঁজ মিলছে না। অভিযোগ, গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে এই তিনজনকে।
শনিবারের এই ঘটনার পর রাত থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছিল বসিরহাটের রাজনৈতিক পরিবেশ। উত্তাপ ছড়ায় গোটা বসিরহাট মহকুমায়, যার জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার ইন্টারনেট পরিষেবা, জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয় রাজ্য রাজনীতিও।
রবিবার সকাল হতেই সেই রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়তে থাকে। প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুজিত বসু, তাপস রায়, মদন মিত্রর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যায় ঘটনাস্থলে। তাঁরা কথা বলেন মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবারের সঙ্গে।
এরপরই রবিবার বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে যায় দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিংহ, সায়ন্তন বসু প্রমুখ। এদিন বিজেপির প্রতিনিধি দলটি কলকাতায় ফেরার সময় তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন মৃত ২ বিজেপি কর্মীর দেহ। কিন্তু মাঝপথেই পুলিশ সেই কনভয় আটকে দেয়। বিজেপি নেতাদের দাবি করেন, তাঁরা কলকাতার নিমতলা শ্মশানে গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চান ওই ২ কর্মীর এবং রাজ্য বিজেপি দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের মরদেহ। কিন্তু তাঁদের দাবি মানতে চায়নি পুলিশ। বলা হয়, মিনাখাঁতেই মৃতদের শেষকৃত্ব সম্পন্ন করতে হবে, কলকাতায় নিয়ে যাওয়া যাবে না।
 এরপরই শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা। বিজেপি নেতারা হুমকি দেন কলকাতায় দেহ নিয়ে যেতে দেওয়া না হলে তাঁরা মালঞ্চ মোড়ের কাছে পথে রাস্তার উপরেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করবেন ওই ২ বিজেপি কর্মীর। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে তর্কের পর পিছু হটে বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা জানান, মানবিকতার খাতিরে মিনাখাঁতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ১২ ঘণ্টার বসিরহাট বনধ ডেকেছে বিজেপি। ১২ তারিখ লালবাজার অভিযানও করবে তারা।
এদিকে গোটা ঘটনায় রাজ্যের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুশাসনের পাঠ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দিকে খেয়াল রাখতে। তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকার এক সঙ্গে কাজ করছে, তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধরনের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সরকারিভাবে অবশ্য রবিবার রাতেই এই চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। বলা হয়েছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
ইতিমধ্যেই ঘটনার রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে দিল্লি তলব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে সোমবার বৈঠক রাজ্যপালের।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও এদিন বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে রাজ্যপালের।

Comments are closed.