সরস্বতী পুজোর থিমে নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি! দেশের বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরে প্রতিবাদের ছায়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও

এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ছায়া এবার সরস্বতীর আরাধনাতেও দেখা গেল শহর কলকাতার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কোথাও দেশের অখণ্ডতার উপর জোর দেওয়া হল, কোথাও তুলে ধরা হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা, কোথাও আবার একেবারে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হল, আমরা এনআরসি, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রীতিমতো সরস্বতী পুজোকে সামনে রেখে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ এনআরসি, এনপিআর, নয়া আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে, তাকেই সমর্থনের কথা জানিয়ে দেয়। বস্তুত, সে কথা মাথায় রেখেই পুজোর মণ্ডপ সজ্জা করা হয়।
শহরের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে বুধবার পুজোর থিম ছিল, বৈচিত্রের মাধ্যমে ঐক্যের আহবান। ‘নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’, দেশ ও সমাজের প্রতি এই বার্তা দেওয়া হয়। স্কুলের এক শিক্ষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ছোটবেলা থেকে সবার মধ্যে যেন এই শিক্ষা দেওয়া যায়, যাতে ধর্ম, পোশাক বা আদব-কায়দা নয়, একজন মানুষ সবার আগে নিজেকে একজন ভারতবাসী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। যিশু চক্রবর্তী নামে এক ছাত্র বলে, আমাদের স্কুল সত্যিকারের সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রকৃত নজির। স্কুলে সব ধর্মের ছাত্ররাই পড়াশোনা করে। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকে, খেলি, একই টিফিন বাক্স থেকে টিফিন খাই। এই সরস্বতী পুজোর আয়োজনও সবাই মিলেই করেছি। সমাজের প্রতি আমরা এই বার্তাটাই দিতে চেয়েছি।

শহরের আর এক পুরনো প্রতিষ্ঠান হিন্দু স্কুল এই বছর দুশো বছরে পা দিল। সেই উপলক্ষে এবারে ছাত্রদের তৈরি করা থিম কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের ‘শান্তিনিকেতন’। স্কুলের শিক্ষক তরুণ ঘোষ জানান, সমস্ত থিমটির ভাবনায় ছাত্ররা। তারাই সবাই মিলে উদ্যোগী হয়ে তৈরি করেছে এইবারের থিম। সমস্ত সাজ-সজ্জায় রয়েছে ছাত্রদেরই তৈরি করা মডেল, আঁকা, এবং শোলার কাজ। স্কুলের এক ছাত্র রাহুল রায়ের কথায়, আমরাই পুজোর আয়োজন করি। এমনকী পুরহিতের দায়িত্বও সামলায় স্কুলেরই এক ছাত্র।
হিন্দু স্কুলের ঠিক উল্টোদিকে হেয়ার স্কুলেরও বয়স আনেক। ওই স্কুলে ভারত ও চিনের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে থিমের মাধ্যমে। স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক প্রণব কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভারত ও চিনের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের মেলবন্ধন বহু পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা গিয়েছে, বৈদেশিক নীতি ও অন্যান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে কিছু টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এই জায়গাটা মনে রেখে আমাদের ছাত্ররা চেষ্টা করেছে বাগদেবীর আরাধনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর এক বার্তা দিতে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙকুর ভট্টাচার্য বলেন, এবার নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি বড় ইস্যু নতুন প্রজন্মের কাছেও। তাই আমরা সরস্বতী পুজোর দিনটিকে প্রতিবাদের দিন হিসেবেই দেখতে চাই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং বহু কলেজে পুজোয় এই বিষয়টি তুলে ধরেছি আমরা।

 

Comments are closed.