করোনাভাইরাস এবং লকডাউনের জেরে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতের প্রায় ৪ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক। রেশন পাওয়া নিয়ে নিত্যই চলছে গোলমাল। এই প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জির। বললেন, মহামারি এবং তা রুখতে লকডাউন চলাকালীন ভারত সরকারকে আরও আগ্রাসী হয়ে গরিবের জন্য খরচ করতে হবে। তাছাড়া আর কোনও উপায় নেই। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাউথ পয়েন্টের প্রাক্তনীর মন্তব্য, টাকা ছাপিয়ে দেশের কল্যাণমূলক তহবিলকে আরও বিস্তৃত করতে ভারতের ভয় পাওয়া উচিত নয়।
এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার কল্যাণমূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা দেশের জিডিপির মাত্র ০.৮%। এই অর্থ থেকে গরিব ও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষকে নগদ এবং রেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কিন্তু কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে খুশি নন নোবেলজয়ী। বলছেন, আমরা এখনও পর্যন্ত এমন কিছুই করে উঠতে পারিনি যা যথেষ্ট কিংবা তার কাছাকাছি। শুক্রবার বিবিসিকে অভিজিৎ বিনায়ক বলেন, আমার মনে হয় সরকারি স্তরে একটা ভয়ের বাতাবরণ আছে মুদ্রাস্ফিতি নিয়ে। কিন্তু ভারতে বিপুল অসাম্যের পরিস্থিতি সামলাতে এই মুহূর্তে ভারত সরকারকে কিছু করতে হবে। সরকারকে অর্থ খরচ করার ব্যাপারে আরও আগ্রাসী মনোভাব নিতে হবে বলছেন এমআইটির প্রোফেসর।
সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ আরও বলেন যে এই মহামারির কারণে কাজ হারানো মানুষ এমন একটা সময়ে জোড়া বিপদে পড়েছেন যখন চাহিদার অভিবে দেশের অর্থনীতি মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তিনি এও বলেন যে লকডাউন একদিকে যেমন জরুরি তেমনই দেশের অর্থনীতি নিয়ে দূরদর্শী পরিকল্পনাও খুবই জরুরি। কারণ তিনি মনে করেন, টিকা না আসা পর্যন্ত এই মহামারি রোখা হয়ত সম্ভব নয়।
তিনি বলেন যে সরকারের স্বচ্ছ পরিকল্পনা করা উচিত আগামী দিনে তাঁরা দেশের অর্থনীতিকে কীভাবে ফের চাঙ্গা করবেন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর জিনিসের চাহিদা বজায় রাখতে সামজিক উন্নয়ন স্কিমের আওতায় আসা মানুষদের হাতে অতিরিক্ত নগদের যোগান দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া ইন্টারভিউতে সেই পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি। ভারতের অর্থনীতি আগে থেকেই চাহিদার অভাবে ভুগছে। বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো তার উপর এসে পড়েছে এই বিশ্ব মহামারি। ফলে স্বভাবতই দেশের বাজারে চাহিদা আরও তলানিতে। এই সময় চালু ওয়েলফেয়ার স্কিমগুলোতে আরও বেশি নগদের যোগান দিয়ে চাহিদার ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করে দিতে হবে সরকারকেই। যাতে লকডাউন পরবর্তী সময় বাজারে চাহিদা ক্রমবর্ধমান হয়।
ডেভলপমেন্ট ইকনমিক্সের কিংবদন্তি অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি বলছেন, এই সময় মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, সরকার তাঁর পাশে আছে এই ভাবনা। তাই নগদের যোগান দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় টাকা ভুল হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্তত ভারতের মতো বিশাল দেশে তা অবশ্যম্ভাবী নয় কি? ডক্টর ব্যানার্জি বলছেন, এই সব ভাবনা পরের স্তরে গিয়ে বরং ভাবা যাবে। বিপুল আকারের অর্থ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এসব হতেই পারে। কিন্তু জরুরি অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে সেসব ভেবে নগদের যোগান না দেওয়া আত্মহত্যার সামিল। দরকার হলে টাঁকশালে ছাপিয়ে মানুষের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
Comments are closed.