কোভিডে বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা! হেলথ ইনস্যুরেন্স আছে তো? কীভাবে স্বাস্থ্য বিমা করলে পাবেন সর্বোচ্চ সুবিধে?

কোভিড ১৯ আজ গোটা বিশ্বের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে এই মহামারি কেড়ে নিচ্ছে লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণ, তেমনই বেহাল দশা হয়েছে অর্থনীতির। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতবর্ষে শুরু হয়ে গেছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এর জেরে একদিকে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তেমনই বাড়ছে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার। আর এই অবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, যদি তাঁরা বা তাঁর পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে কী উপায়? সরকারি হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়। অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানেই লক্ষ-লক্ষ টাকার বিল। কীভাবে সামাল দেবেন সেসব? বা যাদের হেলথ ইনস্যুরেন্স রয়েছে, তাঁরা কীরকম সুবিধে পাবেন? আর তাই স্বাস্থ্য বিমা বা হেলথ ইনস্যুরেন্স নিয়ে আজ বিস্তর প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে।
প্রথমেই বলি, বাজারে প্রচুর সংস্থা রয়েছে যারা হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করছে। কিন্তু আপনাকে বুঝে ও দেখে নিতে হবে কোনটা আপনার জন্য সঠিক। কোনও পলিসি কেনার আগে সব সময় তার সমস্ত টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস ভালো করে পড়ে নেবেন। আর যে এজেন্টের মাধ্যমে আপনি পলিসিটি কিনছেন, সেই এজেন্টও আপনাকে সব কিছু খুলে বলছেন কিনা সেটা ভাল করে দেখবেন। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ পলিসি কেনার সময় সব কিছু ঠিকঠাক দেখে নেন না। এজেন্টের উপরই ছেড়ে দেন। আর এজেন্টও অনেক সময়ে ক্লায়েন্ট হারানোর ভয়ে অনেক তথ্যই সাধারণ মানুষের কাছে চেপে যান। যার ফলে কিন্তু পরবর্তীকালে ক্লেমস রিইমবার্সমেন্টের সময় বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয় আপনাকেই।

অনেক সময় হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি করার সময় সাধারণ মানুষ বেশি প্রিমিয়াম দেওয়ার ভয়ে নিজের শরীরে আগে থেকে যে রোগ রয়েছে তা গোপন করেন। কিন্তু পরবর্তী সময় যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন সেই সব পুরনো রোগের কথা ডাক্তারের কাছে স্বীকার করেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু পরবর্তীকালে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে টাকা ক্লেম করার সময় বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে পারেন আপনি। আগে থেকে শরীরে উপস্থিত রোগের কথা ঘোষণা না করার জন্য কিন্তু আটকে যেতে পারে আপনার ক্লেম। ফলে হাসপাতালের গোটা বিলটাই আপনাকে নিজের পকেট থেকে দিতে হতে পারে। হ্যাঁ, ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম দেওয়া সত্ত্বেও। তাই যখন ইনস্যুরেন্স করাবেন, তখন প্রপোজাল ফর্মে সব সঠিক তথ্য দেওয়া রয়েছে কিনা বা আপনার দেওয়া তথ্য এজেন্ট ফর্মে লিখল কিনা সেটা অবশ্যই দেখে নেবেন।
অনেকেরই ভুল ধারণা থাকে, একটি নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর আর হেলথ ইনস্যুরেন্স করানোর যোগ্যতা থাকে না। বা, ডায়াবেটিস, থায়রয়েডের মত রোগ থাকলেও ইনস্যুরেন্স করানো যায় না। এখানেই বলে রাখি, এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, বা আপনার যাই রোগ থাকুক না কেন, আপনি হেলথ ইনস্যুরেন্স করাতে পারবেন। তবে অবশ্যই কিছু শর্ত সাপেক্ষে। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত আপনাকে প্রিমিয়াম কিছুটা বেশি দিতে হবে, অথবা হাসপাতালের বিলের কিছু শতাংশ আপনাকে নিজের পকেট থেকে কো-পেমেন্ট করতে হবে। কিংবা ধরুন আপনার যদি হার্টের কোনও সিরিয়াস রোগ আগে থেকেই থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে হার্ট বাদ দিয়ে শরীরের বাকি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর আপনি বিমা করতেই পারেন।
অন্যদিকে আরও একটা কথা মাথায় রাখা দরকার, যেটা অনেকেই জানেন না। আপনি যখন একটা পলিসি কিনছেন, সেটা কেনার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু আপনি বিমার সব রকমের সুবিধে পাবেন না। পলিসি কেনার প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাক্সিডেন্টাল ক্লেম ছাড়া আর কোনও রকমের সুবিধে কিন্তু আপনি পাবেন না। এছাড়াও প্রথম বছরে জন্য হয়ত কিছু সংখ্যক রোগের উপর আপনি কভারেজ পাবেন। দ্বিতীয় বছর তালিকাটা আরও কিছুটা বাড়বে। এই ভাবে বাড়তে বাড়তে হয়ত দেখা গেল পাঁচ বছর পর আপনি সব রোগের উপর কভারেজ পেলেন। তাই পলিসি কেনার সময় এই বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখবেন ও দেখে নিয়ে তবেই পলিসি করবেন।
এরপর আসি হাসপাতালের কথায়। আপনি যখন পলিসি করাচ্ছেন, তখন আপনার পলিসির সঙ্গে কোন কোন হাসপাতাল এনলিস্টেড রয়েছে সেটা অবশ্যই ভাল করে দেখে নেবেন। কারণ ক্যাশলেস ট্রিটমেন্ট-এর জন্য কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সেই সমস্ত এনলিস্টেড হাসপাতালেই ভর্তি হতে হবে। তাই হাসপাতালের একটা তালিকা অবশ্যই আপনার কাছে থাকা উচিত। আর তাতে যদি কোনও পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রে সেই পরিবর্তিত তালিকাও অবশ্যই রাখবেন।

এবার আসি হাসপাতালে ভর্তির কথায়। যখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আপনার হাসপাতালে বেডে প্রতিদিন কত খরচ হচ্ছে তাঁর উপরেও কিন্তু নির্ভর করবে আপনার ক্লেমের সময় কত টাকা আপনি পাবেন। ২৪ ঘণ্টা বা তাঁর উপরে যদি আপনি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তবেই আপনি ইনস্যুরেন্সের টাকা ক্লেম করতে পারবেন। সাধারণত মূল ক্লেমের ১ শতাংশ আপনি জেনারেল বেডে থাকার সময় প্রতিদিন খরচ করতে পারেন। আইসিইউ হলে ২ শতাংশ। মানে, যদি আপনার ৫ লক্ষ টাকার পলিসি থাকে, সেক্ষেত্রে, দিন পিছু ৫ হাজার টাকার জেনারেল বেডে থাকতে পারবেন। আইসিইউ হলে ১০ হাজার। তাঁর বেশি হলে কিন্তু যে শতাংশ বেশি দিয়ে আপনি থাকছেন সেই টাকা আপনাকে যেমন দিতে হবে, তেমনই ওষুধ বাদে অন্যান্য খরচ, যেমন টেস্ট বা ডাক্তারের ফি বাবদ যে বিল আপনার হবে, সেখান থেকে সেই শতাংশ টাকা কেটে নিয়ে বাকি টাকা আপনি ফেরত পাবেন। মানে, যদি ধরুন আপনার লিমিট রয়েছে ৫ হাজার টাকার বেড, কিন্তু আপনি ৭ হাজার টাকার বেডে থাকছেন, সেক্ষেত্রে আপনি ৪০ শতাংশ বেশি দামি বেডে থাকছেন। এই টাকাটা তো আপনাকে দিতে হবেই, উল্টে, টেস্ট বা ডাক্তারের ফি বাবদ যা খরচ হবে তা থেকে ৪০ শতাংশ কেটে বাকি টাকা আপনি ফেরত পাবেন। তাই পলিসি করার আগে অবশ্যই এই বিষয়গুলি ভালোভাবে দেখে নেবেন।

 

(লেখক বিশিষ্ট ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার। ইনস্যুরেন্স বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত যে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন: 9836374487, 9836566559 [email protected])

Comments are closed.