শিল্পী দাশগুপ্ত: স্ট্রাগল পিরিয়ডে ধৈর্য হারালে চলবে না, সুযোগ আসবেই, কলকাতায় ছবি করার স্বপ্ন খানদানি শাফাখানার পরিচালকের

লায়ন কিং এবং ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নিয়ে যখন মত্ত সিনেপ্রেমীরা, ঠিক তখনই নিজের প্রথম ছবি নিয়ে দুনিয়া জয় করতে বেরিয়েছিলেন তিনি। সবাই বুঝিয়েছিল, হলিউডের ছবির সঙ্গে খামোখা পাল্লা না দিয়ে, অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত একটা সময় বেছে নেওয়া হোক। ভালো ছবি এমনিই চলে, তার জন্য সেফ সময় খুঁজতে হয় না। বলেছিলেন তিনি। হলিউডের বড় বড় ছবির পাশে দাঁড়িয়ে আজ রমরমিয়ে মাল্টিপ্লেক্স শাসন করছে তাঁর খানদানি শাফাখানা। তিনি খানদানি শাফাখানার পরিচালক শিল্পী দাশগুপ্ত। মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নতুন তারকা পরিচালক কিন্তু মনেপ্রাণে বাঙালি। এখন বলিউডে নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই, কিন্তু বর্তমানে দেশের অন্যতম ব্যস্ত পরিচালকের স্বপ্ন, কলকাতায় ছবি করার। thebengalstoryর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল পরিচালকের নিজস্ব ভাবনাচিন্তা।

 

প্রশ্নঃ খানদানি শাফাখানা নিয়ে কী বলবেন?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ সবচেয়ে বড় কথা, আমরা ছবিটার স্ক্রিপ্ট ফাইনাল করতে নিয়েছিলাম ২ বছর। কিন্তু গোটা ফিল্মটা শেষ হয়েছে মাত্র ৬ মাসে। অত শক্তিশালী স্ক্রিপ্ট না পেলে হয়ত, এত দ্রুত শেষ করতে পারতাম না। একটা ছোট শহরের মেয়ের বড় হয়ে ওঠার গল্প হল খানদানি শাফাখানা। বড় হয়ে ওঠার পথে, কী কী অতিক্রম করতে হয় একজনকে, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি। বাকিটা জানতে গেলে, ছবিটা দেখতে হবে।

 

প্রশ্নঃ আপনার বড় হয়ে ওঠা কোথায়?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ আমার জন্ম ভোপালে। প্রবাসী বাঙালি বলতে পারেন। তারপর সেখান থেকে চলে আসি পুণে। বলতে পারেন, পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সস্টিটিউটের প্রেমে পড়ে গেলাম। এদিকে পুণের কলেজে পড়াশোনা চলছে অন্যদিকে এফটিআইআইতে আস্তে আস্তে  তৈরি হচ্ছে যোগাযোগ, মন দিয়ে কাজ শিখছি। ওঁদের সমস্ত ধরণের কাজে আমি থাকতাম। পরে অবশ্য পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি পুণেতে যোগ দিই। পুণে থেকে পাস করে সোজা মুম্বই।

 

প্রশ্নঃ পরিচালক হবেন, ছোট থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ একেবারেই না। মা ছিলেন ভোপালের থিয়েটার কর্মী। আমার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। চুটিয়ে থিয়েটার করতাম। পরিচালক হতে হবে, এমন কোনও ইচ্ছে মনে না থাকলেও, আমি যে এমনই কিছু করতে চাই, তা বুঝতে পারতাম।

 

প্রশ্নঃ মুম্বইতে গিয়ে স্ট্রাগল করতে হয়নি?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ ২০০৫ সালে মুম্বই আসি। আর প্রথম সিনেমা মুক্তি পেল ২০১৯ এ। মাঝখানের সময়টাকে আপনাদের ভাষায় স্ট্রাগল বলতে পারেন। তবে আমি এভাবে দেখি না। এই সময়ের মধ্যে কত রকমের যে কাজ করেছি। কখনও ডায়লগ লিখেছি আবার কখনও কোনও পরিচালককে অ্যাসিস্ট করেছি। জানতাম, সুযোগ আসবেই। শুধু নিজেকে তৈরি রাখতাম, যেদিন সুযোগ আসবে, সেদিন যেন নিজেকে উজাড় করে দিতে পারি। সুভাষ ঘাইকে অ্যাসিস্ট করতাম। তারপর ফাইন্ডিং ফ্যানি নামে একটি ছবির হিন্দি ডায়লগও লিখেছি।

 

প্রশ্নঃ মুম্বইতে স্ট্রাগলরত ভবিষ্যতের পরিচালক বা অভিনেতাদের কী বলবেন?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ আমাদের বাঙালিদের ধৈর্য একটু কম। তাই দাঁতে দাঁত চেপে মাঝখানের এই সময়টা পার করতে হবে। আর দরকার প্রপার প্ল্যানিং। এখন শুধু সিনেমা নয়, কাজের সুযোগ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। কেউ সিনেমা করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে মুম্বই এসে হয়ত দেখল, সেই সময় সিনেমা করার জন্য কেউ তাঁকে ডাকছে না। ভেঙে না পড়ে অন্য দিকে ট্রাই করা উচিত। ওয়েব সিরিজ তো আমাদের সামনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। মোদ্দা কথা হল, লেগে থাকতে হবে, তাহলে হবেই হবে।

 

প্রশ্নঃ মুম্বইয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মন্ত্রটা কী?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ ধৈর্য, ধৈর্য এবং ধৈর্য। মুম্বইয়ের কাট থ্রোট কম্পিটিশনে টিকে থাকার একমাত্র উপায় হল, নিজেকে আরও তৈরি রাখা। ফিল্ম মেকিংয়ের ফর্মাল ট্রেনিং থাকলে এই ব্যাপারে একটু সুবিধা হতে পারে। তবে নিজেকে তৈরি রাখার কোনও বিকল্প আজও বলিউডে নেই।

 

প্রশ্নঃ হালফিলের বাংলা ছবি দেখা হয়? কার কাজ পছন্দ?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ বাংলা ছবি দেখার সময় বড্ড কমে গিয়েছে। তাও সময় বের করে দেখার চেষ্টা করি। অনীক দত্তের ভূতের ভবিষ্যত দেখেছি। বেশ ভালো। তাছাড়া কৌশিক গঙ্গাপাধ্যায়ের ছবিও ভালো লেগেছে।

 

প্রশ্নঃ বাংলায় ছবি করার পরিকল্পনা?

শিল্পী দাশগুপ্তঃ অবশ্যই। পুরো পরিকল্পনা করা আছে। তবে এখনই নয়। ভবিষ্যতে বাংলাতেও কাজ করব। ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিত রায়েরা যে ভাষায় সিনেমা করে দুনিয়া জয় করলেন, আমি সেই ভাষায়, সেই সংস্কৃতি নিয়ে ছবি করব না, এটা হতে পারে না। এটা আমার একটা স্বপ্ন বলতে পারেন। আর কলকাতা তো আমার প্রাণের শহর। শহরটার একটা আলাদা ফ্লেভার আছে। একদিন ওখানেই সেটল করব, আজই বলে রাখলাম। মিলিয়ে নেবেন।

Comments are closed.