হাঁচি-কাশি দেখে বলে দেবে আপনি করোনা আক্রান্ত কিনা! যন্ত্র তৈরি করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া

করোনা আতঙ্কে তটস্থ সবাই।  হাঁচি-কাশির সময় যতই রুমালে মুখ ঢাকুন না কেন, এখন সংক্রমণের ভয়ে হয় অন্যেরা ফিরে তাকাবেন ওই ব্যক্তির দিকে, নাহলে দ্রুত দূরত্ব বাড়িয়ে সরে যাবেন। কিন্তু এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়ার তৈরি করা এক যন্ত্র বলে দেবে সেই হাঁচি বা কাশির সঙ্গে আদৌ করোনা ভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে কি না। ওই কাশির সঙ্গে কোভিড-১৯ উপসর্গের মিল আছে কি না। শুধু তাই নয়, এই যন্ত্র সেই ব্যক্তির অবস্থান স্পষ্ট করে চিহ্নিত করে ছবি তুলে আপনাকে সজাগ করে দেবে। এমনই ডিভাইস তৈরি করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অচল মিলহানি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া এই দুই পড়ুয়ার তৈরি এই যন্ত্র কোভিড-১৯ এর ফার্স্ট লেভেল স্ক্রিনিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। কোয়ারেন্টিন সেন্টার, অফিস, ক্লাস রুম, যেখানেই বেশি মানুষ জড়ো হচ্ছে এই যন্ত্র বিশেষ সাহায্য করবে।
কীভাবে এই যন্ত্রের কথা মাথায় এল দুই পড়ুয়ার? তাঁরা জানান, দেশে লকডাউন শুরুর আগে বিশেষ একটি ড্রোন তৈরি করেছিলেন,যা অন্ধকারে বা ঘন জঙ্গলের মধ্যে কেউ আটকে পড়লে শব্দ সংকেতের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারবে। এই কাজ চলার সঙ্গে সঙ্গেই এই দুই পড়ুয়ার মাথায় আসে, করোনা ভাইরাস শরীরে আছে কি না তা দূর থেকে কীভাবে জানা যায়, কীভাবে আগেভাগে আশেপাশের মানুষ সজাগ হতে পারেন? এই ভাবনা থেকে গত একমাস ধরে গবেষণা চালান জেইউ-এর এই দুই পড়ুয়া। এই বিশেষ যন্ত্র তৈরি করে তাঁরা চিকিৎসকদেরও দেখান। এই ডিভাইস তৈরিতে তাঁদের সাহায্য করেন অধ্যাপক পি ভেঙ্কটেসরন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (ICNR) এর আধিকারিকদের এই যন্ত্রটি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। যদিও ক্লিনিক্যাল টেস্ট এখনও বাকি আছে। তবে দুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার তৈরি এই যন্ত্রের অভিনবত্বের প্রশংসা করছে আইসিএমআর।
করোনা রোগী চিহ্নিত করতে কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র?
অন্বেষা ও অচল জানান, মনে করা যাক, ভিড় বাসে, অফিসে বা কোনও ক্লাসরুমে কেউ কাশছেন। তাঁদের তৈরি ডিভাইসটি তখন সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির অবস্থান স্পষ্ট করবে প্রথম। তাঁর ছবি তুলে নেবে এই যন্ত্র। তার কিছুক্ষণের মধ্যে এই যন্ত্র বলে দেবে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির কাশির সঙ্গে করোনাভাইরাসের কাশির মিল আছে কি না। গবেষক পড়ুয়ারা দাবি করছেন, এই যন্ত্র বাজারে এলে বাস স্ট্যান্ড থেকে রেল স্টেশন, পাবলিক প্লেসে করোনা আক্রান্তকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা যাবে। যন্ত্রটির দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পড়বে বলে জানাচ্ছেন দুই গবেষক পড়ুয়া।
ক্লিনিক্যাল টেস্টে উতরে গেলেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়ার গবেষণা করোনাভাইরাস রোগীকে চিহ্নিত করতে অনেকটাই সাহায্য করবে বলে আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

Comments are closed.