তালতলা ময়দানে শুরু হল রাজ্য খাদি মেলা, প্রথম দিনই উৎসাহী মানুষের ঢল

পঞ্চম বর্ষে পা দিল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের তালতলা ময়দানের রাজ্য খাদি মেলা। ২০ ডিসেম্বর রাজ্য খাদি মেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ রতন দে, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। মেলা চলবে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। খাদি মেলার প্রথম দিনেই ভিড় উপচে পড়ে স্টলগুলিতে। ক্রেতার সংখ্যা ছিল লক্ষ্যণীয়। মেলায় মোট স্টল ৭৫ টি। তার মধ্যে ৩৪ টি স্টল রয়েছে খাদির। ৪১ টি স্টল গ্রামীণ শিল্পের। রয়েছে পোশাক থেকে শুরু করে মোম, মধু, বাড়ি সাজানোর উপকরণ থেকে নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্য। গান্ধী মূর্তিতে মালা দিয়ে খাদি উৎসবের সূচনা করেন রাজ্য ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
মেলার প্রথম দিনেই ক্রেতাদের আনাগোনায় উচ্ছ্বসিত উদ্যোক্তারা। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের আধিকারি বিশ্বজিৎ সরকার জানান, গত বছর এই মেলা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। এবার তা আরও বাড়বে বলে আশা। তিনি বলেন, এবারের খাদি মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল এর বৈচিত্র্য। খাদি মানে কেবল এক ডিজাইনের পোশাক নয়, নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও পছন্দ বুঝে নতুন ডিজাইনের পোশাক থাকছে এবার তালতলার খাদি মেলাতে।
মেলার উদ্বোধক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, খাদি মানেই যে বয়স্কদের পোশাক হবে, এই চিন্তাধারা এখন ভেঙেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূয়সী প্রশংসা করে স্বপন বাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই আজ কলকাতার কোয়েস্ট, সাউথ সিটির মতো পাঁচটি মলেও যেমন খাদির তৈরি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকাতেও আজ খাদির দোকান আছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের বিশেষ প্রয়োজন অনুভব করেই এই মেলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। হারিয়ে যেতে বসা মসলিন কাপড়ের উৎপাদন শুরু হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে। মন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যের ৩০ হাজার মানুষ খাদি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতে, শুধু উৎপাদন করলেই হয় না, তার সঠিক বিপণন প্রয়োজন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলার সুপ্রাচীন খাদি শিল্প ও শিল্পীদের স্বার্থে এইরকম উৎসব বিশেষ দরকারি। তবে খাদি শিল্পের সমৃদ্ধিতে তিনি বৈচিত্র্য ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্ত বলেন, যেখানে সারা দেশের বেকারি বাড়ছে, অর্থনীতিতে মন্দার জেরে বড় শিল্প তৈরি হচ্ছে না, সেখানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তাঁর দাবি, যেখানে সারা দেশের বেকারি গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে, সেখানে বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারি কমানো সম্ভবপর হয়েছে খাদির মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিশেষ জোর দিয়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদির সঙ্গে যুক্ত কাটুনি, তাঁতি ও শিল্পীদের শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান প্রদান করা হয়। গত বছরের রেকর্ড ভেঙে এবারই সবচেয়ে ভালো বেচাকেনা হবে, আশাবাদী উদ্যোক্তা থেকে দোকানদার সকলেই।

 

Comments are closed.