বিপর্যয়ের মধ্যেও কেউ কেউ বলছেন বাংলা দখল করবো, আগে মানুষকে বাঁচাও, তারপর দখলের প্রশ্ন, নাম না করে অমিত শাহকে তীব্র কটাক্ষ মমতার
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ষপূর্তিতে অমিত শাহ বলেছিলেন, বিজেপির বাংলা দখল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বুধবার সেই মন্তব্যকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বিপর্যয়ের সময় কেউ কেউ বলছেন, বাংলা দখল করবো। মমতার কথায়, আগে মানুষকে বাঁচাও, তারপর তো দখলের প্রশ্ন! বাংলাকে ভালোবাসলে, বাঙালিও আপনাদের ভালোবাসবে।
এদিন পরিযায়ী শ্রমিক পরিবহণ নিয়ে রেলকেও আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রেলের অপরিকল্পনার জন্য মানুষ আজ বিপর্যস্ত। ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচতে লকডাউন করা হল কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবহণের সময় তার বালাই নেই। মমতার কথায়, রেল আজ নিজেই বেলাইন হয়ে বসে আছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন পিএম কেয়ার্স ফান্ড থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পরিযায়ী শ্রমিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী, হকারদের সরাসরি দেওয়ার দাবি তোলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সুবিধা হল তারা প্রয়োজনে টাকা ছাপতে পারে কিন্তু রাজ্য তা পারে না। তাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় গরিব মানুষের হাতে কয়েক হাজার করে টাকা তুলে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীদেরও আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, বাইরে থেকে কিছু লোক প্ররোচনা দিচ্ছে। বলছে বাংলা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ইতিমধ্যেই অন্তত সাড়ে ৮ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরে এসেছেন। ১০ তারিখের মধ্যে সাড়ে ১০ লক্ষ মানুষ বাংলায় ফিরে আসবেন। পাশাপাশি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গই প্রথম এবং একমাত্র রাজ্য যারা পরিযায়ীদের রাজ্যে ফেরার ভাড়া নিজে থেকে দিয়েছে।
বুধবার নবান্নে আমপান পরবর্তী পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় মৎস্যজীবীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গেই তিনি কটাক্ষ করেন বিরোধীদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বলেছিলাম, লকডাউনের আগেই যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের নিজের রাজ্যে ফেরত পাঠাতেন, তাহলে আজ তাঁদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হোত না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এদিন রাজ্যে আমপান বিধ্বস্ত মৎস্যজীবীদের আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। যাঁদের ছোট নৌকা ভেঙে গিয়েছে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। মাছ ধরার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৬০০ টাকা করে, গবাদি পশু প্রতিপালন, হাস-মুরগি প্রতিপালক, গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্যও অর্থ দেওয়া হয়। এছাড়া সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ প্রতিস্থাপনের জন্য আগামী ১০ জুন পরিবেশ দিবস থেকে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে বলেও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাস্তায় বাস, ট্রামের অভাবের কথাও এদিন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে ছাড় পেয়েছেন সরকারি কর্মীরা। মমতা বলেন, বাস না পেয়ে কারও অফিসে ঢুকতে দেরি হলে খাতায় লাল কালি পড়বে না। আধঘণ্টা, একঘণ্টা লেট হতেই পারে।