সুবিচারের আশায় ঘুরতে ঘুরতে পা ব্যথা হয়ে যায় মানুষের, কাদের জন্য বিচার ব্যবস্থা? সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনে জলপাইগুড়ি থেকে প্রশ্ন মমতার

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুর মামলা নিয়ে বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন ‘গুড মানি গুড জাস্টিস’। অর্থাৎ, যাঁদের হাতে টাকা আছে, তাঁরাই সুবিচার পান। সেসময় তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিরোধীরা প্রবল সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু মমতা তাঁর অবস্থানেই অনড় ছিলেন। এত বছর বাদে সেই সুরই ফের শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বোঝালেন, তাঁর অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। শনিবার জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা কাদের জন্য?
মমতার কথায়, সুবিচারের আশায় দোরে দোরে ঘুরতে ঘুরতে সাধারণ মানুষের পা ব্যথা হয়ে যায়। মানুষ যাতে সময়মতো সঠিক বিচার পায় তার জন্য বিচার ব্যবস্থা ও প্রণালীকে আরও মসৃণ হতে হবে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার জন্য দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো। বিচারক এবং বিচারালয়ের সংখ্যা বাড়লেই মানুষের সুবিচার পেতে দেরি করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
শনিবার জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতা আরও বলেন, তিনি নিজেও একজন আইনজীবী, কিন্তু সময়ের অভাবে ‘প্র্যাকটিস’ করা হয়ে ওঠে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক একজন আইনজীবী এতবেশি মামলা নিয়ে ফেলেন যে তাঁর পক্ষে সব মামলা সামলানোই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু একজন মানুষকে অনেক কষ্ট করে একটা মামলার জন্য টাকা জোগাড় করতে হয়। তাই প্রত্যেক মানুষ যাতে সুবিচার পান, সে সম্পর্কে আইনজীবীদের সজাগ হওয়া দরকার বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, সুবিচারের আশায় ঘটি-বাটি বিক্রি করে যে মানুষটি টাকা জোগাড় করেছে তাঁর দিকে তাকানো দরকার।
আদালতে ইংরেজির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন মমতা। তাঁর কথায়, কোনও উকিল যিনি বাংলা মিডিয়াম থেকে পড়াশুনো করে এসেছেন তাঁকে ঝরঝরে ইংরেজি বলার জন্য সময় দিতে হবে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ বুঝতে হলে যে কোন সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক ভাষা জানা দরকার বলেও মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। একজন বিডিও যদি আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে না পারেন, তিনি মানুষের সমস্যার কথা বুঝবেন কী করে, প্রশ্ন মমতার।
মাসখানেক আগে এই জেলারই ময়নাগুড়িতে জনসভা করতে এসে রিমোট টিপে জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা নিয়ে শুরু হয় কেন্দ্র ও রাজ্যের বিতর্ক। শুক্রবার সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করতে এসে সেই প্রসঙ্গ তাঁর বক্তব্যে এসে পড়লেও সুকৌশলে নিজেই তা এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, জীবনে বিতর্ক থাকবেই। তবুও তিনি মনে করেন, অনেক আগেই এই সার্কিট বেঞ্চ তৈরি হওয়া উচিত ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, সার্কিট বেঞ্চ গড়ার চিন্তাভাবনা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। কিন্তু তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসে এই কাজ শেষ করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জলপাইগুড়িবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। তাঁর কথায়, জেলার উন্নয়নের মুকুটে নতুন পালক যোগ করল সার্কিট বেঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গকে আর বলতে হবে না যে তাঁরা অবহেলিত।

Comments are closed.