‘কেষ্ট সব জানে। যারা বলে কেষ্ট শুধু ঝগড়া করে, তারা জানে না ডেভেলপমেন্টের কাজটা ভালো বোঝে সবার থেকে ও।’ সোমবার বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠকে এভাবেই জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর ভূয়সী প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
কিছুদিন আগেই উত্তরবঙ্গের সফর থেকে মমতার অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব ফোন করে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। তবে দু’জনেই সেই কথা তৃণমূল নেত্রীর কাছে ফাঁস করে দেন। অনুব্রত মণ্ডল যে তাঁর কতটা আস্থার পাত্র তা সেদিনের সভা থেকে তা বুঝিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। সোমবার বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেও কেষ্টর প্রতি তিনি কতটা আস্থাশীল তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক ডানদিকের পিছনের দিকে একটি চেয়ারে বসে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের যখন খোঁজ নিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, দলের বিধায়কদের কী কী সমস্যা আছে জানতে চাইছিলেন, প্রায় সব জায়গাতেই শেষ কথা বলেছেন কেষ্টই। দুবরাজপুরের বিধায়ক, সাঁইথিয়ার বিধায়করাও জানান যে, তাঁদের যাবতীয় সমস্যার কথা অনুব্রত মণ্ডলকে বললে সমাধান হয়ে যায়। গোটা জেলার খোঁজখবর রাখেন তিনি। তবে সাঁইথিয়ায় একটি মন্দির পার্শ্বস্ত এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলে অনুব্রতকে বলতে শোনা যায়, ‘জায়গা নাই গো।’ এরপর বীরভূম জেলার সমস্যার বিভিন্ন ইস্যুতেই অনুব্রতর কাছ থেকেই খবরাখবর নিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমের এক বিধায়ক জানান, ‘কেষ্টদা অনেক চেষ্টা করছেন তবু দুবরাজপুরের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক হচ্ছে না।’ তখন অনুব্রত জানান, ‘জায়গা আমি দেখে দিয়েছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে কেন্দ্র ওই সড়ক করছে না। বলেন, দরকারে মানুষকে নিয়ে পোস্টার লাগানো হোক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, জাতীয় সড়কের কাজ না এগোলে ঘেরাও করুন। এরপর মুরারইয়ের বিধায়ক একটি বাইপাস রাস্তা করার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তখন অনুব্রত সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন পিডব্লুউডি সার্ভে করে ফেলেছে। সব কাজে কেষ্টর এই সক্রিয়তায় প্রশাসনিক মঞ্চে তাঁর ঢালাও প্রশংসা করেন মমতা। বলেন, ‘কেষ্ট সব জানে। যারা বলে কেষ্ট শুধু ঝগড়া করে, তারা জানে না ডেভেলপমেন্টের কাজটা ভালো বোঝে সবার থেকে।’ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই কথা শুনেই হাততালি শব্দে ভরে ওঠে প্রশাসনিক বৈঠক স্থল।
তবে এদিনের পুরো বৈঠক মোটেই ভালো মেজাজে কাটেনি মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর ক্ষোভের মুখে পড়েন এক সরকারি আধিকারিক। বীরভূমের মতো তফসিলি জাতি-উপজাতি অধ্যুষিত জেলায় জাতিগত শংসাপত্র প্রদান নিয়ে জটিলতার কথা শুনে রেগে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক কেন সমস্ত পদ্ধতি জানেন না, তা নিয়ে চূড়ান্ত ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তাঁর অজ্ঞানতার জন্য প্রচুর মানুষ সমস্যায় পড়লেন বলে তাঁকে কড়া ভাষায় বকাবকি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
Comments