গরু বেচে স্মার্টফোন! ছেলেদের অনলাইন ক্লাসের জন্য আয়ের একমাত্র উৎস বিক্রি হিমাচলের কুলদীপের

দুধ বেচে কোনওরকমে চলত সংসার।

দুই ছেলের অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন কিনতে পরিবারের মূল উপার্জনের সেই উৎসকেই বিক্রি করতে বাধ্য হলেন বাবা। ঘটনাটি হিমাচলপ্রদেশের জ্বালামুখীর গামার গ্রামের।

করোনা পরিস্থিতিতে দ্রুত বদলে গিয়েছে শিক্ষাদানের মাধ্যম। নিউ ইন্ডিয়ায় ভার্চুয়াল ক্লাসের ধুম পড়েছে। কিন্তু নিউ নর্মালের দস্তুর মেনে অনলাইন ক্লাস করতে পারছে কি গ্রামীণ ভারত? হিমাচলপ্রদেশের গামার গ্রামের কুলদীপ কুমারের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলছে।

কুলদীপের দুই ছেলে অন্নু ও দীপু যথাক্রমে চতুর্থ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। লকডাউনের জেরে সেই মার্চ থেকে তাদের স্কুল বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি চালু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু অন্নু আর দীপু সেই ডিজিটাল ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। তাদের কাছে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কিছুই নেই যে। এদিকে স্কুল থেকে কুলদীপকে চাপ দেওয়া হচ্ছে ছেলেদের পড়াতে চাইলে তাড়াতাড়ি স্মার্টফোন কিনে দিন। বহু চেষ্টা করেও ৬ হাজার টাকা যোগাড় করতে পারেননি কুলদীপ। কোনও উপায় না দেখে অবশেষে গরু বিক্রি করে ছেলেদের স্মার্টফোন কিনে দিলেন তিনি।

লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজকর্ম নেই, দুধ বেচেই কিছু আয় হত কুলদীপের। ছেলেদের পড়াশোনা চালাতে তাকেই বিক্রি করে দিতে হল, কান্নাভরা চোখে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কুলদীপ। গত একমাস ধরে হাজার ছয়েক টাকা জোগাড়ের জন্য কী না করেছেন তিনি! ব্যাঙ্কে লোন নেওয়ার আবেদন করেছিলেন, মহাজনদের কাছে ধার চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আর্থিক হাল দেখে কেউই ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি। এদিকে হাতে ৫০০ টাকাও নগদ নেই, ৬ হাজার টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে সেই ভেবে রাত্রে ঘুম হত না দুই ছেলের বাবা কুলদীপের। তাহলে কি ছেলেদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে? অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস, গরুই বিক্রি করে দিলেন তিনি!

ভাঙাচোরা মাটির বাড়ির মালিক গরিব কুলদীপ কুমারের বিপিএল তালিকায় নাম ওঠেনি। কোনও সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পান না। কুলদীপ জানান, ভাঙা বাড়িটা সারাতে বহুবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করেও ফল হয়নি। সহায় সম্বলহীন কুলদীপের শুধু একটাই আশা, দুই ছেলে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, ঘুচবে অভাব, দারিদ্র। তাই যেনতেন প্রকারে তাদের পড়া চালিয়ে যেতে পরিবারের একমাত্র আর্থিক সম্বলকে বিক্রি করে দিতেও পিছপা হলেন না বাবা। ভারতের ‘নিউ নর্মাল’ এর এও এক ছবি!

ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় বিধায়ক রমেশ ধাওয়ালা অবশ্য বিস্মিত। তাঁর কথায়, ছেলেদের পড়ানোর জন্য গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে এর চেয়ে দুঃখের কিছু নেই। কুলদীপকে আর্থিক সহায়তা করতে বিডিও-র সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান ওই বিধায়ক।

Comments are closed.