সিবিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নাগেশ্বর রাও’কে নিয়ে বিতর্ক, তাঁর বিরুদ্ধেও আসছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ

সিবিআই-এর অন্দরে নজিরবিহীন কোন্দল ও শীর্ষ স্তরে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় মঙ্গলবার মাঝরাতেই সংস্থার প্রধান অলোক ভার্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। দুজনের অফিস সিল করেই তদন্ত চালাচ্ছে সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন। অলোক ভার্মার জায়গায় আপাতত সিবিআই প্রধান হিসাবে অন্তর্বর্তীকানীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্থার অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাওকে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, ওড়িশা ক্যাডারের আইপিএস অফিসার এই নাগেশ্বর রাও নিজেও বিতর্কের উর্দ্ধে নন। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।

কে এই নাগেশ্বর রাও?

আদতে অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দা হলেও নাগেশ্বর রাও ১৯৮৬ ব্যাচের ওড়িশা ক্যাডারের আইপিএস অফিসার। ২০১৫ সালে অনিল সিনহা সিবিআই প্রধান থাকার সময় তিনি যোগ দেন সিবিআইয়ে। সূত্রের খবর, নাগেশ্বর সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনার (সিভিসি) কে ভি চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। সিবিআইতে কোনও অফিসার যোগ দিলে তাঁর নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করে এই সিভিসি। সিভিসি’র তরফে ক্লিনচিট পেয়েই সিবিআইতে নেওয়া হয় নাগেশ্বর রাওকে। কিন্তু, নাগেশ্বর রাও এর সিবিআইয়ে যোগদান নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন সেসময় সিবিআইয়ের স্পেশাল ইউনিটের প্রধান অমিতাভ সিংহ ঢিঁলো।
যদিও তৎকালীন সিবিআই প্রধান ও সরকার কেউই সেসময় তাঁর এই আপত্তিতে কর্ণপাত করেননি। নাগেশ্বর রাও’কে সিবিআইয়ের চেন্নাই জোনের প্রধান করে পাঠানো হয়। এর পরেই নয়া বিতর্ক শুরু হয় তাঁকে নিয়ে। সেসময় স্টেট ব্যাঙ্কের একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় জালায়াতি ও অর্থ তছরূপ সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে চেন্নাইয়ের ভিজিএন ডেভেলপার্স নামের এক সংস্থার বিরুদ্ধে। তার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। অভিযোগ ওঠে, অভিযুক্ত ভিজিএন ডেভেলপার্সের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তকারীদের ঠিকঠাক তদন্ত করতে দেননি চেন্নাই জোনের তৎকালীন প্রধান এই নাগেশ্বর রাও। অভিযুক্তদের বাড়ি তল্লাশি করার অনুমতিও নাকি তিনি অধস্তন তদন্তকারীদের দেননি। উল্টে সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়ার আগেই তদন্তকারীদের ক্লোজার রিপোর্ট জমা দিতে বলেন।
এরই মাঝে সিবিআই প্রধান হন অলোক ভার্মা। এরপর নাগেশ্বর রাও-এর বিরুদ্ধে ভার্মার কাছে অভিযোগ জমা পড়লে, তিনি তাঁকে চেন্নাই থেকে চন্ডিগরের সিবিআই দফতরে ট্রান্সফার করে দেন। চেন্নাইয়ের ওই মামলাটির দায়িত্ব দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুর সিবিআই কর্তাদের। বুধবার নাগেশ্বর রাওয়ের বিরুদ্ধে ট্যুইট করে তাঁর বিরুদ্ধে এই দুর্নীতিতে যুক্ত থাকারই ইঙ্গিত দেন ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন।
তবে এখানেই শেষ নয়, ২০১০ সালে ট্যাক্স জমা দেওয়ার সময় তিনি ভুল তথ্য জমা দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে নয়া আরও একটি অভিযোগ সামনে আসে। নাগেশ্বর রাও যখন ভুবনেশ্বরে ফায়ার সার্ভিস ডিরেক্টরেটের প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন, সেসময় নাকি দমকলকর্মীদের পোশাক কেনা নিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার জালিয়াতি হয়।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও বুধবার তাঁর ট্যুইটে নাগেশ্বর রাওকে সিবিআই প্রধান করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও সিবিআইয়ের তরফে এবিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Comments are closed.