চিট ফান্ড তদন্তে রাজীব কুমারের পাশে দাঁড়িয়ে সিবিআইকে কেন্দ্রের ‘পোষা কুকুর’ বলে আখ্যা কংগ্রেস মুখপত্র ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’এ

সারদা চিট ফান্ড কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে সরব, তখন জাতীয় কংগ্রেসের মুখপত্র, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ সিবিআই-এর তীব্র সমালোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজীব কুমারের পাশে দাঁড়াল।
গত ৭ই ফেব্রুয়ারি ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘হেরল্ড ভিউ : সিবিআই’স কলকাতা মিসঅ্যাডভেঞ্চার প্রুভস ফাইনালি ইট’স আ ল্যাপডগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে, সিবিআইকে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘কোলে বসে থাকা (পোষা) কুকুর’ বলে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে।
‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ২০১৩ সালে গুয়াহাটি হাইকোর্ট সিবিআই-এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার এক্তিয়ার নিয়ে সেই প্রশ্নই ফের উঠল কলকাতার সাম্প্রতিকতম ঘটনায়।
‘ন্যাশনাল হেরল্ড’-এ লেখা হয়েছে, পরিকল্পনা করে সিবিআই প্রথমে মিডিয়াকে খবর পাচার করে, গ্রেফতারি এড়াতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার গা ঢাকা দিয়েছেন। ঠিক পর দিন ৪০ জন সিবিআই অফিসার কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়ি ঘেরাও করেন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশে। শুরু হয় কলকাতা পুলিশ ও সিবিআই অফিসারদের বিশৃঙ্খল ধস্তাধস্তি। এরপরই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, সিবিআই-কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এ প্রকাশ, ওই ঘটনার পরদিনই সিবিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাও তামাম মিডিয়ার সামনে জানিয়ে দেন, সারদা চিট ফান্ড মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ আছে সংস্থার হাতে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সারদা চিট ফান্ড মামলার তথ্য বিকৃত করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন নাগেশ্বর রাও। এর ২৪ ঘন্টা পর কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানায়, রাজীব কুমার তথ্য লোপাট করতে পারেন। তাই দ্রুত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হোক। যদিও, মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ নেই।
‘ন্যাশনাল হেরল্ড’-এর ওই প্রতিবেদনে বিজেপি সরকারকে এক হাত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে যে চিট ফান্ড মামলা চলছে, যে সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, হঠাৎ কী কারণে এমন তৎপরতা দেখাল সিবিআই? পাশাপাশি, সারদা মামলার বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) প্রধান রাজীব কুমার ল্যাপটপ, লাল ডায়েরি এবং পাঁচটি মোবাইল ফোন তাঁদের হাতে তুলে দেননি বলে সিবিআই যে অভিযোগ করছেন, একে ‘অতি সন্দেহজনক’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’এর অভিমত, চাইলেই এই কেসে অন্যভাবে এগোনো যেত। কিন্তু সিবিআই অন্তর্বর্তীকালীন ডিরেক্টরের অবিবেচক মন্তব্য, কোনও এফআইআর বা চার্জশিট ছাড়াই সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে হেনস্থা, সব মিলিয়ে সিবিআই তার অপেশাদার ব্যবহার ও কেন্দ্রের পোষা কুকুরের পরিচয় দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজীব কুমার ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী যখন ধরনা শুরু করেন তখন তাঁকে ফোন করে এবং পরদিন ট্যুইট করে তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন খোদ রাহুল গান্ধী।

Comments are closed.