তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তরাই-ডুয়ার্সের আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকরা। মূলত চা বাগান এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন করা রাজেশ লাকরা ওরফে টাইগারের অন্তর্ভুক্তিতে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে তৃণমূল শক্তিশালী হবে বলে মনে করছে নেতৃত্ব। আর যোগ দিয়েই টাইগারের হুঙ্কার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে সব আসন জিতবে তৃণমূল।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থী জন বার্লা। তৃণমূলের দশরথ তিরকেকে হারিয়েছিলেন প্রায় আড়াই লাখ ভোটে।
আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত কুমারগ্রাম, কালচিনি, মাদারিহাট এবং জলপাইগুড়ি জেলার মাল ও নাগরাকাটা বিধানসভা তপসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত।
লোকসভার বিধানসভাওয়ারি হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে ৫ টি কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। তারমধ্যে কুমারগ্রামে বিজেপি এগিয়ে ২৮ হাজারের বেশি ভোটে। কালচিনিতে ৪৭ হাজার, মাদারিহাটে ৪৩ হাজার এবং নাগরাকাটায় বিজেপি এগিয়ে ৫০ হাজার ভোটে।
বিধানসভা ভোটের মুখে রাজেশ লাকরাকে দলে টেনে কি এই সমীকরণে কোনও বদল আনতে পারবে তৃণমূল? রাজেশ লাকরার সব আসন জেতার দাবির বাস্তবতা কতটা?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন তরাই-ডুয়ার্সে হার জিত ঠিক করেন আদিবাসীরা। সেখানে রাজেশ লাকরার সংগঠন ভারতীয় মূলনিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে আদিবাসী ভোটের পরিমাণ ৬০ শতাংশের উপর। গত লোকসভায় যে ভোট গিয়েছিল বিজেপির খাতায়। এবার সেই ভোট ফেরানোর ভার মমতা দিয়েছেন রাজেশকে। রাজেশ লাকরা বলছেন, লোকসভার সময় বিজেপির খেলা ধরতে পারেননি আদিবাসীরা। কিন্তু বেলা গড়াতেই বোঝা যাচ্ছে তা ছিল স্রেফ ভাঁওতা। আদিবাসীদের ঘুম ভেঙ্গেছে। তাঁর দাবি বিজেপি যে আসলে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে তা আদিবাসীরা মেনে নেবেন না। বিজেপি সাংসদ জন বারলাকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, বিধানসভায় একটি আসন জিতে দেখাও।
দীর্ঘদিন আলিপুরদুয়ারে পড়ে থেকে তৃণমূলের সংগঠন সামলাচ্ছেন ঋতব্রত ব্যানার্জি। তাঁর মতে রাজ্য সরকারের চা সুন্দরী প্রকল্প প্রকৃত অর্থে গেম চেঞ্জার হতে চলেছে। পাশাপাশি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উদ্যোগে গত ১ বছরে ৯ টি বন্ধ চা বাগান খুলেছে। যার মধ্যে ৮ টি বাগান আলিপুরদুয়ার জেলায়। ঋতব্রত ব্যানার্জির দাবি, এর সরাসরি প্রভাব দেখা যাবে ভোট বাক্সে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তরাই-ডুয়ার্সে ঝাড়খণ্ডি আদিবাসী ছাড়া নেপালিদেরও বাস। এবার বিমল গুরুং তৃণমূলের দিকে। ফলে তরাই-ডুয়ার্সের নেপালি ভোট তৃণমূলে যেতে পারে। আবার রাজেশ লাকরার তৃণমূলে যোগদানে এলাকার ৬০ শতাংশ আদিবাসী ভোট ঢুকতে পারে ঘাসফুল বাক্সে। মূলত এই সমীকরণের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, একাধিক বন্ধ বাগান খোলা এবং চা শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। ফলে একদিকে টাইগারের সাংগঠনিক প্রভাব অন্যদিকে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ, এই দুয়ের উপর ভর করে ২১ সালে তরাই-ডুয়ার্স জেতার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল।
অঙ্ক মিলবে কি? উত্তর মিলবে মে মাসে।