বাড়ির খাবারেই রেস্তোরাঁর স্বাদ – Restaurant Style Cooking

সুস্বাদু খাবার দিয়েই নাকি যে কারোর মন জয় করা যায়। আর রসনাবিলাসে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। তাই শহর থেকে গ্রামের অলিগলিতেও রেস্তরাঁ ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছে। হোটেল রেস্তরাঁর খাবারের প্রতি ছেলে-বুড়ো সবারই আলাদা আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে রেস্তরাঁয় গিয়ে খাওয়ার উপায় নেই।

অনেক হোটেল রেস্তরাঁ লকডাউনের জেরে বন্ধ। কিছু হোটেল, খাবারের দোকান যদি খোলাও থাকে তা পারতপক্ষে এড়িয়েই চলছেন সবাই। তাই বাইরের ভাজাভুজি খাবারে অভ্যস্তরা টানা বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে অসুবিধায় পড়েছেন বৈকি। কিন্তু চাইলে বাড়িতেই আয়োজন করতে পারেন রেস্তরাঁর মতো খাবারের পরিবেশ। তৈরি করে ফেলতে পারেন সুস্বাদু রেসিপি, restaurant style cooking। কীভাবে?

বাইরের মটন বিরিয়ানি খেতে যতই ভালো লাগুক, এর গুণগত মান কিন্তু বাড়ির মতো নয়। আর যদি স্বাদের প্রশ্ন থাকে সেক্ষেত্রে একটু রেসিপি মেনে তৈরি রান্না করলেই বাড়ির বিরিয়ানি রেস্তরাঁর বিরিয়ানিকে স্বাদে-মানে তিন গোল দিতে পারে। তবে স্বাদ ছাড়াও রেস্তরাঁর খাবারের প্রতি আলাদা আকর্ষণের কারণ লুকিয়ে আছে পরিবেশন, সাজানো-গোছানো পরিবেশ, আলোর ব্যবহার আর সবাই মিলে সেজেগুজে খেতে যাওয়ার মজায়। রেস্তরাঁয় খাবার খেতে গেলে বাড়ির মতো বারবার রান্নাঘরে যেতে-আসতে হয় না, এটা-ওটা এগিয়ে দিতে হয় না। তাই বাড়ির খাবার টেবিলে পরিবেশন ও পরিবেশে বৈচিত্র‍্য এনে দেখতে পারেন।

 

রেস্তরাঁ বাড়ির কিচেনের পার্থক্য

home food like restaurant

 

রেস্তরাঁয় অনেক মানুষের খাবার একসঙ্গে রান্না করা হয়। তাই সেখানকার কিচেন বাড়ির কিচেনের চেয়ে আলাদা। হোটেল ও রেস্তরাঁয় রান্নার জন্য থাকেন পেশাদার শেফ। তবু বাড়িতেই restaurant style cooking সম্ভব। তার জন্য সবার আগে দরকার রান্না করার মানসিকতা। রান্নার কাজ যদি আনন্দ ও আগ্রহ নিয়ে করা হয় যে কোনও বড় রেস্তরাঁর স্বাদ আনা সম্ভব রেসিপিতে। তাই বিখ্যাত শেফের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে বাহারি রেসিপি দেখে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পদ।

 

ভালো রান্নার টেকনিক

শুধু উপযুক্ত পরিবেশ আর উপাদানই নয়, বরং টেকনিক ও উপস্থিত বুদ্ধি যে কোনও রান্না লা-জবাব করে তুলতে পারে। এ জন্য রান্নার উপায় নিয়ে আগে ভাবতে হবে। তারপরে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে রান্নার কাজে হাত দিতে হবে। বাড়ির খাবারে রেস্তরাঁর পরিবেশ আনতে দরকার সুন্দরভাবে পরিবেশন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও কুকারিজ যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে সবজি ও ফল কাটতে পারেন। এতে খাবারের আকর্ষণ বেড়ে যায়। খাবারের রং, আকার ইত্যাদি চোখে লাগা জরুরি। আবার বাড়ির পুরনো প্লেট বদলে যদি নতুন বা আলাদা কোনও প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করেন তাতেই বাড়ির খাবার টেবিলে রেস্তরাঁর ভাব ফুটে উঠবেই।

 

খাবারের স্বাদ বাড়ানোর কিছু টিপস

restaurant style presentation

 

খাবারের স্বাদ বাড়াতে আমরা কত কিছুই করি। বাড়িতে তৈরি পদের অন্যরকম স্বাদ পেতে টুকিটাকি বদল আনতে পারেন। যেমন, ডাল রান্নায় যদি একটু গুড় মিশিয়ে দেওয়া যায় তাতে স্বাদও বাড়বে।

মাছ-মাংস কেনার পর ডিপ ফ্রিজে তোলার আগে পরিষ্কার করে লবণ-হলুদ মাখিয়ে রেখে দিন, তাতে স্বাদ বাড়বে। এর সঙ্গে সামান্য ভিনিগার দিলেও তাজা ভাব থাকবে খাবারে।

দোকানের মতো মুচমুচে সিঙ্গারা বা নিমকি ভাজতে হলে ময়দা মাখার আগে সামান্য সুজি এবং একটু বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন। তেল দিয়ে ময়দা মাখার আধঘণ্টা পর ভাজুন।

স্যান্ডউইচ বানিয়ে বেশিক্ষণ রেখে দিলে সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তাই স্যান্ডউইচ বানানোর পর সামান্য দুধ পাউরুটির ওপর বুলিয়ে দিন। সাত-আট ঘণ্টা এতে স্যান্ডউইচ  ভালো থাকবে।

 

রেস্তরাঁয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে এমন কিছু জিনিস ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর

হোটেল, রেস্তরাঁয় খাবারের স্বাদ ভালো রাখতে অনেক কিছুই করা হয় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। যেমন স্যুপ, সস, সবজি বা মাংসকে সুস্বাদু করতে গিয়ে রেস্তোরাঁয় অনেকটা মাখন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে খাবার খাওয়ার অনেকক্ষণ পরও এর স্বাদ মুখে লেগে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

 

ক্রিম

মাখনের মতো ক্রিমও রেস্তোরাঁর খাবারে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে স্যুপ ও মাংস জাতীয় খাবারে। পাস্তাতে হোয়াইট সসের নাম করে অনেকে ক্রিম ব্যবহার করেন। তাতে স্বাদ কয়েকগুণ বাড়লেও স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর।

 

তেল

খাবারের স্বাদ বাড়ায় তেল। খাবার সুস্বাদু করতে গিয়ে বেশি তেলে খাবার রান্না করা হয় রেস্তোরাঁতে। যা একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। ধীরে ধীরে এই খাবারগুলো আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

 

অ্যানিমেল ফ্যাট

বার্গার ইত্যাদি খাবারের মাংসে যদি রসালো পদার্থ দেখতে পান, তখনই বুঝবেন এতে অ্যানিমেল ফ্যাট মেশানো হয়েছে। হোটেল, রেস্তরাঁয় মাংস জাতীয় যে কোনও খাবারেই এই ফ্যাট ব্যবহার করা হয়।

 

নুন

unhealthy taste enhancer

 

রেস্তোরাঁয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে নুন বেশি করে ব্যবহার করা হয়, এমনকী খাবারে দেওয়া হয় টেস্টিং সল্ট। স্যালাড ও মিষ্টি জাতীয় খাবারেও বেশি করে এই লবণ ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চরক্তচাপ তৈরি করতে পারে।

তাই রেস্তোরাঁর বিভিন্ন মুখরোচক পদের রেসিপি জেনে বাড়িতেই বানিয়ে restaurant like food। এই সময় বাইরের খাবার এড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

Comments are closed.