সুরুচি সংঘে অন্ন-বস্ত্র দান, চেতলা অগ্রণীতে দুঃসময়, ত্রিধারায় শারদ সংকলন! ববি-অরূপ-দেবাশিস কুমারের পুজো এবার কেমন?
ইতিহাসে বারবার দেখা গিয়েছে যখনই অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে তখনই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছে অজানার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তাগিদে, অচেনাকে চেনবার জন্য। আমরা এখন যে সময়ে দাঁড়িয়ে আছি এই সময়ও সভ্যতার এক সংকটাকীর্ণ মূহুর্ত। কিন্তু মানবজাতি আজও ভুলে যায়নি সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের সুদূরপ্রসারী ফলাফলকে। তাই হয়ত মহামারীর সময়ে এবারের কলকাতার পুজো শুধু উৎসব নয়, মনুষ্যত্বের এক জয়গাথাও।
দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পুজো হল নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ। করোনা-পৃথিবীতে সুরুচির পুজো আগামী দিনে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে বঙ্গবাসীকে। এই চরম সংকটে দাঁড়িয়ে তাঁরা প্রতিবারের মত আড়ম্বরের দিকে ছুটছেন না বলেই জানিয়েছেন পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি ডক্টর ডি জে ভৌমিক। সুরুচির এবারের থিম, এবার উৎসব নয়, হোক মানুষের পুজো। করোনা, আমপান দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবার তাঁরা ১০ হাজার ১৫৫ জন মানুষকে দেওয়ার জন্য অন্ন, বস্ত্র ও মাস্ক সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি ডি জে ভৌমিক। সরকারি সমস্ত সুরক্ষা ও বিধিনিষেধ মেনেই মণ্ডপ বা অষ্টমীর অঞ্জলি কিংবা দশমীর বিসর্জন করা হবে। এবারের সমস্ত পেশাতেই কর্মী সংকোচনের কথা মাথায় রেখে সুরুচি সংঘের পুজোয় যুক্ত মৃৎশিল্পী, ঢাকি, সহশিল্পীদের বেতন পূর্বের বছরের মতো এবছরও একই রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জয় ব্যানার্জি। তবে স্পন্সরশিপের এবারে তেমন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন সঞ্জয়বাবু।
দক্ষিণ কলকাতার আর এক ঐতিহ্যশালী পুজো চেতলা অগ্রণী। এবারে ২৮ তম বর্ষে পদার্পণ করছে চেতলা অগ্রণী। সভ্যতার সংকটে দাঁড়িয়ে ২৮ তম বর্ষে তাদের নিবেদন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুঃসময়’। এবছরের পুজোতে গত বছরের থেকে অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটছে বলে জানাচ্ছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সৃঞ্জয় চ্যাটার্জি। শিল্পী অনির্বাণ দাসের সৃষ্টি এই দুঃসময়কে কাটিয়ে ওঠার রসদ জোগাবে বলে জানাচ্ছেন সৃঞ্জয়বাবু। চেতলা অগ্রণীও এবারের পুজোয় সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজার, মাস্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ‘চেতলা অগ্রণী ‘ এবারের পুজোকে ভার্চুয়াল ভাবে দেখানোর পরিকল্পনা করছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.chetlaagraniclub.com) থেকে বলে জানাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায়চৌধুরি। সরকার থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা তাঁরা তাঁদের শিল্পীদের দান করেছেন বলে জানাচ্ছেন সব্যসাচীবাবু। তবে প্রতিবারের তুলনায় এবারের বাজেট ছয় ভাগের এক ভাগ, স্পন্সরশিপের কোনও দেখা নেই। সব মিলিয়ে চেতলায় ‘দুঃসময়’- এর মধ্যে দুঃসময় বলা যেতে পারে।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম প্রাসঙ্গিক একটি পুজো হলো ত্রিধারা সম্মিলনী। ত্রিধারার পুজো এবারে ৭৪ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। বিগত বছরের সঙ্গে এই বছরের পুজোকে একইভাবে দেখতে নারাজ পুজো কমিটির সাধারণ সহ সম্পাদক মুকুল মান্না। মুকুলবাবু জানান, সরকারি সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই এবারে তাঁদের পুজো অনুষ্ঠিত হবে। ত্রিধারার প্যান্ডেল তিনদিক সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকবে। প্রতি বছর অষ্টমীর ভোগ জনসাধারণের জন্য যেভাবে উন্মুক্ত থাকে এবছর তা থাকবে না বলে মুকুলবাবু জানাচ্ছেন।
ত্রিধারার পুজোতে এবছরে খাবারের কোনও স্টল দেখা যাবে না। ত্রিধারার পুজোয় এবছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো ‘শারদ সংকলন’। নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, শুভাপ্রসন্ন, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তিদের লেখা এই শরতে এক নতুন আলো দেখাবে বলেই আশা করা যেতে পারে।