মুখ্যমন্ত্রী-মুখ্যসচিবের নির্দেশ সত্ত্বেও ৬৭ বছরের কোভিড রোগীকে কার্যত ঘাড়ধাক্কা সল্টলেক আমরি হাসপাতালের! চরম ভোগান্তির পর ভর্তি সরকারি হাসপাতালে

গত সপ্তাহেই সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শুনতে লজ্জা লাগে যদি সিনিয়র ডাক্তারকেও চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতে হয়। এটা অমানবিক!
কোভিড পর্বে নয়া অভিযোগ, নার্সিং হোমে ভর্তি না নেওয়া। এই সমস্যা সমাধানে মুখ্যসচিব বৈঠক করেছেন শহরের বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে। সরকারি নির্দেশ, প্রতিটি হাসপাতাল-নার্সিং হোমের সামনে ডিসপ্লে করতে হবে, কত বেড খালি। কিন্তু এত কিছুর পরও শহরের ষাটোর্ধ্ব এক নাগরিকের বাস্তবে এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হল সোমবার।
সোমবার নিউটাউনের বাসিন্দা পেশায় এক ব্যবসায়ীর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। স্ত্রী মারা গিয়েছেন, একমাত্র ছেলে চাকরি সূত্রে আমেরিকায়। সল্টলেক আমরি হাসপাতালের ডাক্তারই ফোন করে তাঁকে রিপোর্ট পজিটিভ আসার কথা জানান। বলেন, দ্রুত ভর্তি হয়ে যেতে। কিন্তু সেই ভর্তি হওয়া নিয়েই দিনভর চলল বেনজির নাটক।
গোটা ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূর। তাঁর অভিযোগ, কোভিড পজিটিভ রোগী আমরি সল্টলেকে যাওয়ার জন্য পাননি কোনও অ্যাম্বুলেন্স। বাধ্য হয়ে অসুস্থতা সত্ত্বেও নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে নিউটাউন থেকে সল্টলেকের আমরি কোভিড হাসপাতালে পৌঁছন এবং বলেন আমরি সল্টলেকের চিকিৎসকই ফোন করে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানিয়ে ভর্তি হতে বলেছেন। আমরিতে নথিভুক্তির ১৫০ টাকা এবং রিপোর্টের খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকাও দিয়েছেন তিনি।
রঞ্জিৎ শূরের অভিযোগ, সল্টলেকের আমরি কোভিড হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি রোগীকে। উল্টে হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথের সামনে নীলচে রঙের পোশাক পরা কিছু স্বাস্থ্যবান লোক তাঁদের হাসপাতালের মূল বিল্ডিংয়ের ধারেকাছেও যেতে দেননি। তাঁরা নিজেদের ডাক্তার বলে পরিচয় দেন। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে রোগী জানান, তাঁর ছেলের অফিসের স্বাস্থ্য বিমা পলিসির সঙ্গে আমরি হাসপাতাল এনলিস্টেড। কিন্তু অভিযোগ, একথা বলার পরও আমরি সল্টলেক জানায়, সেখানে বেড নেই। সংক্রমিতের রিপোর্ট এনে তাঁদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়, বলা হয় অন্য কোথাও যান। পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি কোনও নিয়ম কানুন সেখানে খাটে না। কারণ সেটি বেসরকারি হাসপাতাল।
এরপর চলে শহরের প্রায় প্রতিটি নার্সিং হোমে একটি বেডের খোঁজে ফোন। অভিযোগ, সল্টলেকেরই কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতাল থেকে বলা হয়, বেড নেই, তবে পাশের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা হতে পারে। রুম খরচ দৈনিক ১০ হাজার টাকা, সঙ্গে প্রতিদিন ৭ টি করে পিপিই, যার এক একটির দাম ১,১৫০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে চিকিৎসার খরচ, ডাক্তার-নার্সের ফিজ। খরচের বহর শুনেই পিছিয়ে যান তাঁরা।
বেসরকারি হাসপাতালে এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার পর করোনা সংক্রমিত ৬৭ বছর বয়স্ক মানুষটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানে বলা হয়, স্বাস্থ্য ভবন থেকে লিখিয়ে আনতে হবে। এরপর স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, সংক্রমিতের কোনও রেকর্ডই নেই। জানা যায়, আমরি সল্টলেক কোভিড হাসপাতাল ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট তখনও আইসিএমআরের সাইটে আপলোড না করায়, সংক্রমিতের সম্বন্ধে কোনও তথ্য সরকারি ভাণ্ডারে নেই। ফলে আবার তাঁকে অসুস্থ শরীরেই যেতে হয় সল্টলেক আমরি হাসপাতাল।
শেষ পর্যন্ত সোমবার বেশি রাতে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছেন ওই ব্যবসায়ী। এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে খবর হাসপাতাল সূত্রে।
কেন আমরি হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হল এবং কেন সংক্রমিতের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট সরকারি তথ্য ভাণ্ডারে আপলোড করা হল না, তা নিয়ে এবার অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন সংক্রমিতের বন্ধুরা।
সংক্রমিত রোগীর সল্টলেকের আমরি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল, তাকে ভয়াবহ বললে কম বলা হয়। সরকারি তরফ থেকে যখন কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, একজন রোগীকেও ফেরানো যাবে না, তখন একের পর এক রোগী ফেরানোর অভিযোগ আসছে শহরের নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলো বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাত্রাছাড়া খরচ।
অভিযোগ মুখ্যসচিব বলা সত্ত্বেও বহু জায়গায় ডিসপ্লে হচ্ছে না খালি বেডের সংখ্যা। এমনকী আমরি সল্টলেকের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারবাবু রোগীকে ভর্তি হতে বললেও, তা মানা হয় না! এবং গোটা পর্বটি চলাকালীন আমরি সল্টলেকের মুখপাত্ররা হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের বারান্দায় নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলে যান সার্ভিস রোডে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ্ব সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে।

আমরি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতালের সব বেডই ভর্তি ছিল, তাই সংক্রমিতকে জায়গা দেওয়া যায়নি। অমানবিক আচরণ বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে এবং সরকারি ওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড না করার যে কথা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়।

Comments are closed.