বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নৌকা বাইচ ফিরিয়ে আনল হুগলি বলাগড়ের আমরা ক’জন, জানেন এর ইতিহাস?

নৌকা বাইচ। বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য, কিন্তু অনেক কিছুর মতোই তা প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকেই ফিরিয়ে আনার এক প্রয়াস নিল হুগলির বলাগর ব্লকের অন্তর্গত সোমড়া অঞ্চলের ‘আমরা ক’জন’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

গত ১ এবং ২ অক্টোবর বলাগড়ের পশ্চিম পাড়া ও তেঁতুল পাড়ার  নিকটবর্তী নদীর ঘাটে দু’দিনব্যাপী এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ‘আমরা ক’জন’। ‘আমরা ক’জন’ কমিটির প্রধান উদ্যোক্তা অরুণ রাজবংশী ও পলাশ হালদার জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে পর্যন্ত এই বাইচ প্রতিযোগিতা প্রতি বছর হোত। কিন্তু বর্তমানে তা হারিয়ে যেতে চলেছে। হারিয়ে যাওয়া খেলার মান ফেরাতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করেছেন সুজয় হালদার, সঞ্জীবন ভর, মঙ্গল হালদার, তারা হালদার সহ ‘আমরা কজন’ সংস্থার অন্য সদস্যরা।

কিন্তু জানেন এই নৌকা বাইচের ইতিহাস?

বাইচ খেলার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে মতপার্থক্য আছে। তবে ‘বাইচ’ শব্দটির অর্থ হল ‘বাজি’। সাধারণত নদীকেন্দ্রিক অঞ্চলে এই খেলার প্রচলন ছিল ব্যাপক হারে। সাংবাদিক বিজিত কুমার আচার্য্য ‘নৌকা বাইচ’ প্রতিযোগিতা শুরুর ইতিহাস সম্পর্কে দুটি জনশ্রুতির উল্লেখ করেছেন।

জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে স্নানার্থীদের বহু নৌকায় চাপিয়ে মাঝিরা নদী পারাপারে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। এ থেকেই নাকি নৌকা বাইচের শুরু! এছাড়াও জনশ্রুতি আছে, পীর গাজি আঠারো শতকের শুরুর দিকে মেঘনা নদীর একদিকে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে থাকা ভক্তদের কাছে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু ঘাটে কোনও নৌকো ছিল না। ভক্তরা তাঁর কাছে যেতে একটি ডিঙ্গি নৌকা খুঁজে বের করেন। যখন নৌকা মাঝ নদীতে পৌঁছায় তখনই নদীতে তোলপাড় আরম্ভ হয়। নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তখন চারপাশের যতো মাঝি ছিলেন তাঁরাও খবর পেয়ে নৌকা নিয়ে ছুটে আসেন। সারি সারি নৌকা একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে। এ থেকেই নাকি নৌকা বাইচের গোড়াপত্তন।

নৌকা বাইচের বিশিষ্টতা হল যে কেউ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। অক্টোবরের শুরুতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ১০ টি গ্রাম (আবদুলপুর, উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, সোমড়া, সুখরিয়া, পাইগাছি, বাঁকিপুর, কামারডিঙ্গি, আনন্দনগর, যশরা) থেকে মোট ৪৮ জন প্রতিযোগী খেলায় অংশগ্রহণ করেন। একই কাঠামোর তৈরি ছোট ডিঙি নৌকাই ছিল এই খেলার উপকরণ। দর্শকের সংখ্যাও ছাড়িয়েছিল হাজার। উপস্থিত ছিলেন হারু হালদার, নারায়ণ চন্দ্র দাস সহ এলাকার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। করোনা মোকাবিলায় উদ্যোক্তরা মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখেছিলেন।

বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের মধ্যে ‘নৌকা বাইচ’ লোক সংস্কৃতি বা কৃষ্টির একটি অঙ্গ। হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় বলাগড়ের ‘আমরা ক’জন’ সংস্থা।

Comments are closed.