রক্তগোলাপে ঢাকা ইরফানের কবর, ছবি দিয়ে কবিতা ও সিনেমার সংলাপে অভিনেতাকে স্মরণ স্ত্রী ও পুত্রের, কী লিখলেন তাঁরা

“কিছু বলব আমি তোমায়: প্রতিদিন মানুষ মারা যায়, এবং এটা শুধুমাত্র শুরু।
প্রতিদিন, কবরের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় নতুন বিধবারা, জন্ম হয় অনাথের।
তারা হাত জড়ো করে বসে,চেষ্টা করে এই নতুন জীবন নিয়ে ভাববার…” এবারের সাহিত্যে নোবেল জয়ী মার্কিন কবি লুইস গ্লাকের কবিতা দিয়ে এভাবেই ইরফান খানকে স্মরণ করলেন স্ত্রী সুতপা শিকদার। ইনস্টাগ্রামে লাল গোলাপে ঢাকা ইরফানের কবরে ঢাকা ছবি দিয়ে জীবন ও মৃত্যুকে এভাবেই উদযাযাপন করলেন তিনি। প্রয়াত ইরফান ও সুতপা শিকদারের পুত্র বাবিলও এই একই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে একটি মর্মস্পর্শী নোট লেখেন। যা দেখে চোখ ভিজে গিয়েছে বহু ইরফান ফ্যানের।
দুই বছর ধরে মারণ কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষে হার মানতে হয় পর্দার পান সিংহ তোমরকে। গত ২৯ এপ্রিল চিরনিদ্রায় ঢলে পড়েন অভিনেতা ইরফান খান। করোনা ও লকডাউনের কারণে বেশি কেউ তাঁদের প্রিয় অভিনেতার শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি। শেষবারের মতো সামনে থেকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি ‘লাইফ অফ পাই’এর অভিনেতাকে। শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন ইরফান ও সুতপার দুই ছেলে বাবিল এবং অয়ন।
এর মধ্যে মাঝেমাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরফানকে নিয়ে ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা লেখেল সুতপা। তবে এদিনের পোস্ট যেন অনেক বেশি মর্মস্পর্শী। আবার পোয়েটিকও বটে।


পুত্র বাবিলও রাশিয়ান চিত্র পরিচালক তারকোভস্কির স্টকার সিনেমার সংলাপ দিয়ে বাবাকে স্মরণ করেছেন। লেখার মর্মার্থ খানিকটা এমন, “মানুষ যখন সবে জন্মায়, তখন সে দুর্বল ও নমনীয়। যখন মারা যায় সে কঠোর এবং সংবেদনহীন। যখন একটি গাছ বৃদ্ধি পায়, তা কোমল ও নমনীয়। কিন্তু যখন তা শুকনো এবং শক্ত হয়ে যায়, তখন তার মৃত্যু হয়। কঠোরতা এবং শক্তিমত্তা যেন মৃত্যুর দুই সঙ্গী। নমনীয়তা এবং দুর্বলতা হ’ল সতেজতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ যা কঠোর হয়ে গিয়েছে তা আর কখনও জিততে পারে না।’ বাবার উদ্দেশে বাবিল আরও লেখেন, আমার প্রথম সিনেমা- রচনার জন্য তিন বছর আগে প্রথম তোমার সঙ্গে বসে সিনেমাটা দেখছিলাম। সিনেমাটা দেখার সময় বারবার থামিয়ে দিচ্ছি। যেভাবে তুমি আমাকে শেখানোর জন্য থামিয়ে দিতে। এখন নিজেকে সেভাবে শেখাচ্ছি…


ইরফানের প্রতি স্ত্রী সুতপা ও পুত্র বাবিলের এই হৃদয়স্পর্শী বার্তা মন ছুঁয়ে গিয়েছে নেটিজেনদের। এই দুটি পোস্টে প্রিয় অভিনেতার প্রতি সম্মানসূচক মন্তব্য দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা।

Comments are closed.