মোদী, রাহুল, অমিত শাহ সহ দেশের একাধিক রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ কমিশনে

নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী, অমিত শাহ থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, একাধিক রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল নির্বাচনী বিধিভঙ্গের। ১০ ই মার্চ নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে লাগু হয়েছিল নির্বাচনী আচরণ বিধি। তারপর কাটেনি একমাসও। এখনও শুরুই হয়নি প্রথম দফার নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন রবিবার, ৭ ই এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অভিযোগ জমা পড়েছে মোট ১১২ টি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এরাজ্য থেকে জমা পড়েনি একটিও অভিযোগ।
কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে জমা পড়েছে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ। ১২ ই মার্চ গুজরাতের গান্ধীনগরে জনসভা করেছিলেন রাহুল গান্ধী। সেখানে নিজের বক্তব্যে তিনি সুপ্রিম কোর্ট, দেশের সংবিধানকে নিয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন ভুল তথ্য পেশ করেছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। তাঁর এই বক্তব্যগুলিতে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ করে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন এলজেপির পঙ্কজ রামানুজ। পাশাপাশি একই অভিযোগে কমিশনে পৃথক দুটি অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপির লিগাল সেলের নেতা পারিন্দু ভগত। কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে এছাড়াও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনের দফতরে।
২৭ শে মার্চ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন বলে সিপিএমের অভিযোগ জমা পড়েছিল কমিশনের দফতরে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধেও বিধিভঙ্গের অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেশ শর্মার মন্তব্য নিয়েও কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন একাধিক রাজ্যের রাজ্যপালরাও।
বর্তমানে রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহ মোদী বন্দনা করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন সেই অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থও হয়েছে ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি গোয়ার রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও বিধিভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে কমিশনের প্রকাশ করা তালিকায়।
ট্রেনে ও বিমানে মোদী ছাপ চায়ের কাপ, টিকিট নিয়েও ভারতীয় রেল এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ জমা পড়েছে নয়াদিল্লির নির্বাচন সদনে। কংগ্রেসের ন্যায় স্কিমকে তীব্র আক্রমণ করে ইতিমধ্যেই কমিশনের সতর্কবার্তার মুখে পড়েছেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার। একইভাবে সেনাকে মোদীজির সেনা বলেছিলেন বলে কমিশন সতর্ক করেছে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিরুদ্ধেও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দলগতভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ হয়েছে। আহমেদাবাদে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসেছিল সর্দার প্যাটেল মেমোরিয়াল ট্রাস্টে। যে ট্রাস্ট সরাসরি কেন্দ্রের সহায়তা পায়। সেখানে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করা নির্বাচনী বিধিভঙ্গ, এই মর্মে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মোদীর বায়োপিক নিয়েও কমিশনে বিধিভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে মূলত বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে জম্মু-কাশ্মীর থেকে।
সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক আধিকারিক ও পুলিশ কর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। এরাজ্যেও কলকাতার সিপি সহ ৪ শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতেই বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের যে দ্রুততায় নির্বাচন কমিশন বদলে দিচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের এত অভিযোগ সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?

Comments are closed.