২০ বছর পর ভোটের ময়দানে নেমে তারকার মুখে মুকুল

পরিসংখ্যান বলছে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রটি বিজেপির সেফ সিট।

একুশের ভোটে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় বিজেপির সবচেয়ে হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম মুকুল রায়। ২ দশক বাদে তিনি ফিরেছেন ভোটের ময়দানে। আর ফিরেই তাঁকে নামতে হচ্ছে বাংলার অন্যতম তারকা প্রার্থী তৃণমূলের কৌশানী মুখার্জির বিরুদ্ধে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রটি বিজেপির সেফ সিট।
বঙ্গ বিজেপির অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী মুকুল রায় ভোট লড়ছেন কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে। কিন্তু তাঁর নাম ঘোষণা হতেই কটাক্ষের তির উড়ে গিয়েছে তৃণমূল থেকে বিজেপি শিবিরে। প্রথম দিনই তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা কৌশানী মুখার্জি মুকুল রায়কে খোঁচা দিয়ে বলেন, আমার প্রতিপক্ষ কোনওদিন ভোটে জেতেনি। তাহলে কীভাবে তিনি হেভিওয়েট হলেন! সেই সঙ্গে তৃণমূলের কৌশানীর সংযোজন, একেই ভোটের ময়দানে দেখা গেল ২০ বছর পর। সেবারও হেরেছিলেন। এবারও হারবেন। নিশ্চিত প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামা তৃণমূলের তারকা প্রার্থী।
কৌশানীর কটাক্ষের সুর তীব্র হলেও ২০১৯ সালে লোকসভার বিধানসভাওয়ারি ফল বলছে, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকেও বিজেপির আসন বেশি সুরক্ষিত। কারণ, শেষ লোকসভা ভোটে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র জিতলেও নির্দিষ্ট কেন্দ্র অর্থাৎ কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা আসনে বিজেপি ৪০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল। কিন্তু কৌশানীর আত্মবিশ্বাস কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ৬৬ বছরের মুকুল রায়কে।
মুকুল রায়ের রাজনীতি-যোগ কংগ্রেসের হাত ধরে। তারপর মমতা ব্যানার্জির হাত ধরে তৃণমূলে। ২০০১ সালে ‘হয় এবার, নয় নেভার’ ভোটে মমতা ব্যানার্জি মুকুলকে দাঁড় করিয়েছিলেন বারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত জগদ্দল কেন্দ্রে। সেখানে মুকুল হেরে যান। তারপর থেকে আর ভোটে লড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। একাধিকবার মমতা তাঁকে পাঠিয়েছেন রাজ্যসভায়।
২০১৭ সালে জোড়া ফুল ছেড়ে মুকুল যান পদ্মফুলে। মুকুল বরাবর ভোটে লড়ার চাইতে রণকৌশল সাজাতে বেশি পারদর্শী বলে দাবি করা হয়। সেই মতোই মুকুল রায়কে এতদিন ভোটে দাঁড় করায়নি বিজেপি। লোকসভায় দিলীপ ঘোষ লড়লেও বাদ গিয়েছিলেন মুকুল। বরং বাংলা দখলের ফাইনাল রাউন্ডে প্রার্থী বাছাইয়ে বড়ো ভূমিকা ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের, বলে মনে করা হয়। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের সাম্প্রতিক কৌশল বদলের প্রেক্ষিতে বাকিদের মতো ভোটের ময়দানে নামতে হয়েছে মুকুল রায়কে।
পরিসংখ্যান যদিও নিশ্চিত করছে মুকুল রায়কে, কিন্তু কাঁটা হয়ে বিঁধছে তৃণমূল প্রার্থীর আগ্রাসী প্রচার কৌশল। পাশাপাশি সাংসদ তথা নদিয়ার তৃণমূল প্রেসিডেন্ট মহুয়া মৈত্র নিজে কৌশানির ভোট কৌশল সাজাচ্ছেন। পরিকল্পনা করেই কৃষ্ণনগর উত্তরে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কৌশানী মুখার্জি। তারই অঙ্গ শুরুতেই মুকুল রায়কে নিয়ে কটাক্ষ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের পাটিগণিতে মুকুল এগিয়ে থাকলেও শুধু অঙ্কে ভোটের ধাঁধা মেলে না। তৃণমূলের সংগঠিত গেমপ্ল্যান এবং সংগঠনের শক্তি কৃষ্ণনগর উত্তরে যে কোনও হিসেব উল্টে দিতে সক্ষম। আবার বিজেপির সংগঠনও এলাকায় যথেষ্ট মজবুত। সবমিলিয়ে অঙ্কে এগিয়ে থাকলেও বাস্তবের মাটিতে তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সংগঠনকে হাতের তালুর মতো চেনা মুকুল রায় তারকা কৌশানীকে টক্কর দিতে কোন পথ ধরেন, সেটাই এখন দেখার।

Comments are closed.