রাঁচিতে হেমন্তর শপথ গ্রহণের মঞ্চে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো শুরু, সভায় মধ্যমণি মমতা, রাহুল হাত ধরে জানতে চাইলেন, কেমন আছেন

রাঁচির মোহরাবাদি ময়দানে জেএমএম, কংগ্রেস, আরজেডি জোটের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান রবিবার কার্যত বিরোধী ঐক্যের একটা মঞ্চ (Opposition Unity) হয়ে উঠল।

কে ছিলেন না ওই মঞ্চে? মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী, এম কে স্ট্যালিন, কানিমোঝি, শরদ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, তেজস্বী যাদব, শিবু সোরেন, কংগ্রেস শাসিত দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেইলট, ভূপেশ বাঘেল-সহ আরও অনেকেই। আসেননি শরদ পাওয়ার, আরবিন্দ কেজরিওয়াল, উদ্ধব ঠাকরে। তবে তাঁরা হেমন্তকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।

যদিও এই বিরোধী ঐক্যের মধ্যে যে একবারে চোনা পড়েনি, তা নয়। এত বড় বিরোধী মঞ্চে দেখা মেলেনি অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতীকে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ জয়ের পর হেমন্তকে ট্যুইট করে তবু শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মায়াবতী এখন পর্যন্ত চুপ। ২০১৮ সালের মা মাসে বেঙ্গালুরুতে জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাত ধরে থাকতে দেখা গিয়েছিল মায়াবতীকে। লোকসভা ভোটের আগে কুমারস্বামীর শপথ অনুষ্ঠান বিরোধী ঐক্যের একটা মহড়া হলেও ভোটে তার ছাপ পড়েনি। লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধী ঐক্য দানা বাঁধেনি। রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীরা জোট দূরে থাকুক, ন্যূনতম আসন সমঝোতা পর্যন্ত করতে পারেনি। ভোটের অনেক আগে থেকে তৃণমূল নেত্রী বিজেপি বিরোধী সার্বিক ঐক্য (Opposition Unity) গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সেই প্রচেষ্টাও বিফলে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী থেকে তাবড় বিজেপি নেতারা বিরোধীদের ওই তথাকথিত মহা জোট বন্ধনকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, এসবে কোনও লআভ হবে না। বিজেপিই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসবে। তাঁদের সেই ভবিষ্যদ্বাণীই মিলে গিয়েছিল।
লোকসভা ভোটের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পালটে গিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপি হেরে গিয়েছে। তাতে বিরোধী দলগুলি বেশ উজ্জীবিত হয়েছে। তার উপর সম্প্রতি এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনপিআর-এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদী আন্দোলন বিজেপিকে সামান্য হলেও ব্যাকফুটে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। দলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী কবুল করেছেন, এই আন্দোলন যে এরকম জায়গায় চলে যাবে তা তাঁরা বুঝতেই পারেননি। তা ছাড়া এই আন্দোলনের পিছনে কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল নেই। সাধারণ মানুষ, ছাত্র, যুবরা যে যার মতো করে পেরেছে, রাস্তায় নেমে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য অভিযোগ করেছেন, এই আন্দোলনের পিছনে কংগ্রেস এবং শহুরে নকশালদের ইন্ধন রয়েছে।
বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির হার এবং এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে ফের কিছুটা কাছাকাছি এনেছে। এই আবহে রাঁচিতে যেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধী নেতাদের উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবার বিরোধী নেতারা কোনও বৈঠক করেননি ঠিকই। তবে নেতাদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতে এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা রাজ্যে রাজ্যে চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। ওই মঞ্চের মধ্যমণি ছিলেন অবশ্যই মমতা। তিনি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অনেক আগেই মঞ্চে পৌঁছে যান। বাম, ডান নেতাদের সঙ্গে তাঁকে ঘুরে ঘুরে কথা বলতে দেখা যায়। রাহুল গান্ধী মমতার হাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে কথা বলতে থাকেন।
মমতা গত কয়েকদিন ধরেই এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিজেপি বিরোধী সব দলকে একসঙ্গে আন্দোলন করতে বলে আসছেন। তিনি সব দলকে এ ব্যাপারে চিঠিও দেন। শনিবারই কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া মমতার চিঠির জবাব দিয়েছেন। তিনি মমতার প্রস্তাবে সায়ও+ দিয়েছেন। এই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে। কোন দল কার সঙ্গে যাবে বা যাবে না, তা পরের কথা। তবে হেমন্তের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে যে ফের বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার সলতে পাকানো শুরু হল, এটা বলাই যায়।

Comments are closed.