প্রতিবাদের নতুন ভাষা শেখাচ্ছে কলকাতার ‘শাহিনবাগ’

মাঠের চারিদিকে শুধু সারি সারি কালো মাথার ভিড়। সেই ভিড়ে আট থেকে আশি, কে নেই। মাঝে টাঙানো মাত্র দুটি ত্রিপল। ভিড়ের চোটে মাটিতে পা রাখার জায়গা নেই। মাঠ জুড়ে অসংখ্য বাঁশের খুঁটি পোঁতা রয়েছে। এর কোনওটার মাথায় মহাত্মা গান্ধী, কোনটায় বি আর আম্বেদকর, আবার কোনটার মাথায় রাজা রামমোহন রায়ের ছবি। মনে হয় যেন এই প্রতিবাদে সামিল তাঁরাও। ভিড়ের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। তার কোনওটায় লেখা, ‘নো ক্যা’, কোনওটায় লেখা, ‘নো এনআরসি’, বাচ্চাদের হাতে জাতীয় পতাকা। কেউ আঁকছেন ছবি, কেউ গাইছেন গান, কারও গলায় আবৃত্তি, কেউ দিচ্ছেন স্লোগান।
এর মাঝেই মঞ্চ থেকে উঠল ‘আজাদি’ স্লোগান। সঙ্গে সঙ্গে গোটা ময়দান যেন একই সুরে গর্জে উঠল। মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা ঠিক এই চিত্রটাই ধরা পড়ল কলকাতার ‘শাহিনবাগ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে। সেখানে গত ৭ জানুয়ারি থেকে সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর-এর বিরুদ্ধে জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে লাগাতার ধর্নায় সামিল হচ্ছেন হাজারো মানুষ।


এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে একদিকে যেমন ভিড় বাড়াচ্ছে ছাত্র ও যুবসমাজ, ঠিক সেরকমই এই লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই প্রবীণরাও। প্রথম থেকেই এই প্রতিবাদ সভায় মহিলাদের অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে। বেনিয়াপুরের আমিনা বিবি থেকে সন্তোষপুরের রুকসার বেগম, সবাই নিজেদের সংসার ফেলে এসেছেন এই প্রতিবাদে সামিল হতে। আর মায়েদের হাত ধরে এসেছে অনেক কচিকাঁচাও। সেরকমই এক মাকে দেখা গেল নিজের শিশুকে মঞ্চে বসে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতে। অনেকে আবার বাড়িতে সেলাই-এর কাজ করেন। রোজ হিসেবে টাকা পান। কিন্তু সেসব এখন বন্ধ। কারণ জিজ্ঞেস করা হলে এক মহিলা বলেন, “এ তো আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। অস্তিত্বই যদি না থাকে, কাজ করে করব কী?” যে যখন সময় পাচ্ছেন, চলে আসছেন এই নতুন লড়াইয়ের ময়দানে।


মাত্র ২৫ জন মিলে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ সভায় আজ হাজারো মানুষের ঢল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে প্রতিজ্ঞা করেছেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনার। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের অধিকারের এই দাবি যতদিন না পূরণ হচ্ছে, ততদিন চলবে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি। একজন বলে উঠলেন, ‘মরে গেলেও এই আন্দোলন থামবে না’। গানে, কবিতায়, স্লোগানে এ ভাবেই ভরপুর কলকাতার ‘শাহিনবাগ’।

Comments are closed.