জেলে ভালো ব্যবহার, চাষ করতে ধর্ষক রামরহিমের প্যারোলে সম্মতি জানিয়ে বিতর্কে হরিয়ানার বিজেপি সরকার

নিজের খেতে চাষের কাজ করতে ধর্ষক রামরহিম প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানালেন। জেলে ভালো ব্যবহারের সার্টিফিকেট দিয়ে সেই আবেদনে সম্মতি বিজেপি শাসিত হরিয়ানা সরকারের। রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠেছে।

ধর্ষণের দায়ে আগেই ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় স্বঘোষিত গুরু ডেরা সাচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিমের। পাশাপাশি এক সাংবাদিক খুনে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রোহতকের জেল সুপারিনটেনডেন্ট সেই রাম রহিমেরই ‘ভালো ব্যবহারের’ ভূয়সী প্রশংসা করে হরিয়ানার সিরসা জেলা প্রশাসনের কাছে ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ, জেলের ভেতর কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হয়নি ধর্ষণের দায়ে জেল খাটা রাম রহিম।  তবে সূত্রের খবর, রামরহিমের নামে কোনও চাষের জমি নেই। ফলে এই যুক্তিতে ধর্ষক রামরহিমের প্যারোল পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
গত ২১ শে জুন প্যারোলে মুক্তির আবেদন পেশ করেন রামরহিমের আইনজীবী। সেই আবেদনে ধর্ষক রামরহিম জানায়, সিরসায় নিজের জমিতে চাষবাস করতে ৪২ দিনের ছুটি দরকার। সাংবাদিক খুনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশের ছয় মাসের মধ্যে প্যারোলে মুক্তির সেই আবেদন গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের কয়েকমাস আগে রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তি প্রসঙ্গে ধর্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। হরিয়ানার মন্ত্রী অনিজ ভিজের মতে, যে কোনও আসামীর মতো ধর্ষণ ও খুনের দায়ে গ্রেফতার হওয়া রাম রহিমেরও অধিকার আছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করার। রাজ্য সরকার কি রামরহিমের প্যারোলের আবেদনের বিরোধিতা করবে, সরাসরি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিলেও রাজ্য সরকার যে ধর্ষক রামরহিমের প্যারোলে আপত্তি জানাবে না, তা স্পষ্ট। বরাবরই রাজনৈতিক নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ স্বঘোষিত বাবা রামরহিম।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদী রাম রহিমের ভূয়সী প্রশংশা করেছিলেন। ২০০৭ সালে পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আবার কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছিল রাম রহিম। এমনকী তার বিরুদ্ধে যখন ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, সেই ২০১৭ সালেও রাম রহিম পাশে পেয়েছিল বিজেপি নেতাদের। যদিও বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে ধর্ষক রামরহিমের প্যারোলে মুক্তির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। রামরহিমের সাজা শোনানোর দিন যে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, তাতেও সরকারের তরফে নরম মনোভাব নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রামরহিমের শিষ্যদের তাণ্ডবে সেদিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল সিরসা। মৃত্যু হয়েছিল একাধিক মানুষের। এবার সেই ধর্ষক রামরহিমের প্যারোলে মুক্তি, তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের প্রসঙ্গই ফের উস্কে দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

 

Comments are closed.