অর্থনীতির হাল ফেরাতে ৩ বছরের জন্য শ্রম আইন বাতিল উত্তরপ্রদেশে, শ্রমিকের স্বার্থ দেখবে কে? প্রশ্ন বিরোধীদের

করোনার জের, কোভিড ১৯ পরবর্তী সময়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে শ্রম আইনে বিপুল বদলের পথে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বদল সম্পূর্ণভাবে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী। আপাতত ৩ বছরের জন্য এই ঢিলেঢালা শ্রম আইন লাগু থাকবে বলে অর্ডিনান্স আনা হয়েছে।

বুধবার উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অর্ডিন্যান্স জারির সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

প্রেস বিবৃতিতে যোগী সরকার জানায়, কোভিড-১৯ এর জেরে কৃষি থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব নতুন এবং চালু ব্যবসার ক্ষেত্রেই এই অর্ডিন্যান্স বলবৎ হল। কারণ, লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ায় উত্তরপ্রদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে এবং যার ফলে কারখানাগুলিতে উৎপাদন বন্ধ। রাজ্য সরকার বিবৃতি দিয়ে তারপর বলেছে, অর্থনীতিকে লাইনে ফেরাতে নতুন শিল্প এবং বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। শ্রম আইনের আওতা থেকে বেশিরভাগ শিল্প এবং বাণিজ্যকে ছাড় দিলেও মহিলা এবং শিশু শ্রমের বিরোধিতায় তৈরি আইন, ক্রীতদাস প্রথা বর্জন আইন, ক্ষতিপূরণ আইনের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রকে শ্রম আইনের মধ্যে রাখা হয়েছে।

শ্রম আইনের যে ধারাগুলোকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের ইউনিয়ন করার অধিকার, কাজের পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা সংক্রান্ত ধারা প্রভৃতি।

জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালের বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯২৩ সালের ওয়ার্কম্যান কম্পেনসেশন অ্যাক্ট বা ক্ষতিপূরণের আইন, ১৯৭৬ সালের বন্ডেড লেবার অ্যাক্ট বা ক্রীতদাস প্রথা বর্জন আইন ইত্যাদি বলবৎ থাকবে। বাকি শ্রমিক আইনের কোনও ধারা আপাতত প্রয়োগই করবে না যোগী সরকার।

এর ফলে শ্রমিক স্বার্থ বিঘ্নিত হবে না কি? উত্তরপ্রদেশের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে তার উত্তর মেলেনি। কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় যে আইন প্রণয়ন হয়েছিল, অর্থনীতির হাল ফেরাতে তাকেই বাতিল করা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের মনোভাব নিয়ে।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রামপ্রিয় গোপালকৃষ্ণন বলেন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপ একশো বছর পিছিয়ে নিয়ে গেল আমাদের। শ্রমিকদের আবার দাসের মতো অবস্থায় পড়তে হবে, শোষণ সীমা ছাড়াবে। যা দেশের মানবাধিকার ও নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আইনত চ্যালেঞ্জ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

করোনাভাইরাস এবং তা রুখতে লকডাউনের জেরে গোটা দেশেই থমকে গিয়েছে অর্থনীতি। এবার আস্তে আস্তে অর্থনীতির চাকাকে ঘোরানোর প্রয়াস শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যেই শ্রমিকদের কাজের সময় বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করে দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আরও সুবিধা দিতে এবার একেবারে অর্ডিনান্স জারি করল উত্তরপ্রদেশ।

Comments are closed.