আরএসএস নেতার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ বিজেপি নেত্রীর, অভিযোগপত্রে আরও ৪ বিজেপি নেতার নাম

রাজ্যে আরএসএসের অন্যতম প্রবীণ প্রচারক তথা আরএসএসের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় গ্রাহক পঞ্চায়েতের সর্বভারতীয় প্রচারক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের  বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ আনলেন রাজ্য বিজেপির এক নেত্রী। গত ৩১ অগাস্ট এই মর্মে তিনি বেহালা মহিলা পুলিশ থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ দলের মোট পাঁচ জন প্রথম সারির নেতা ও আরএসএস প্রচারকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন এই নেত্রী। অমলেন্দুবাবুর  পাশাপাশি, কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে এই এফআইআরে নাম রয়েছে বর্তমান রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও। বলপূর্বক হোটেলের ঘরে আটকে রাখা, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ আরএসএসের সর্বভারতীয় নেতা শিবপ্রকাশেরও নামেও আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই বিজেপি নেত্রী। এছাড়াও এফআইআরে রয়েছে রাজ্য বিজেপির সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জি ও বিদ্যুত মুখার্জি নামে এক আরএসএস প্রচারকের নাম।

এই মহিলা নেত্রীর মূল অভিযোগ, পুর্ব পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সাথে সহবাস ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। যার জেরে গর্ভবতী হয়ে তাঁকে তিনবার গর্ভপাতও করাতে হয় বলে অভিযোগ নেত্রীর। তাঁর দাবি, আরএসএসের এই প্রচারক ২০১৪ সাল থেকে তাঁর ফ্ল্যাটে আসতে শুরু করেন। দুজনেই বিজেপি ও আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজ্যে, রাজ্যের বাইরে একসাথে যেতেন এবং পারিবারিক সুত্রে আগে থেকেই এই নেতার সাথে পরিচয় থাকায় ক্রমে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নেত্রী জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যান অমলেন্দুবাবু।

নেত্রীর কথায় তাঁর ছেলে পরে সব জানতে পেরে অমলেন্দুবাবুকে তাঁকে সামাজিক স্বীকৃতি ও আইনি অধিকার দেওয়ার কথা বললে তাতেও সম্মতি দেন ওই নেতা। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখেননি। নেত্রীর কথায়, তিনি অমলেন্দুবাবুকে এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে, নিজের জমি, বাড়ির আসল নথি ও উইল তিনি অমলেন্দুবাবুকে দিয়ে দেন। যা এখনও ওই নেতার কাছেই আছে। নেত্রীর দাবি, মাঝে অমলেন্দুবাবুকে বিজেপি থেকে সরিয়ে শুধুমাত্র আরএসএসের প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। কিন্তু বছর খানেক ধরে বিজেপিতে ফিরতে চাইছিলেন অমলেন্দু। তাই এবিষয়ে বিজেপির নেতা মন্ত্রীদের সাথে কথা বলতে এই বছরের ৫, ৬, ৭, ৮ অগাস্ট দিল্লিতে যান এই মহিলা বিজেপি নেত্রী। সাথে অমলেন্দুবাবুও ছিলেন।

তাঁর আরও অভিযোগ, এরপর ৮ অগাস্ট কলকাতা ফেরার পর থেকেই তাঁর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এই নেতা। ফোন ধরেননি, মাঝে একবার ফোনে মেসেজের উত্তর দিলেও ফের ফোন বন্ধ করে দেন তিনি। মাঝের এই প্রায় এক মাস তাঁর সাথে কোনও যোগাযোগই সম্ভব হয়নি নেত্রীর। তাই বাধ্য হয়ে ৩১ শে অগাস্ট তারিখ পুলিশে অভিযোগ জানান তিনি। যাবতীয় ঘটনা তাঁর ছেলে মেইল করে সংঘ প্রধান মোহন ভগবতকেও জানিয়েছেন।

তবে এখানেই শেষ নয়, নেত্রীর দাবি, রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি দিলীপ ঘোষও ২০১৫ সালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁকে একাধিকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। প্রতিবাদ করায় তাঁকে অপমান করা হয় বলে নেত্রীর দাবি। তাঁর আরও দাবি, একাধিকবার তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়ে তাঁর বাড়ি আসতে চেয়েছেন সংঘের সর্বভারতীয় প্রচারক শিবপ্রকাশ। তা না মানায়, দিলীপ ঘোষের চক্রান্তে শহরের এক হোটেলে তাঁকে একা ডেকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি একদিন শ্লীলতাহানি করেন শিবপ্রকাশ। বলপূর্বক আটকে রেখে তাঁর কাপড় ছিড়ে দেওয়া হয়, মারধর করা হয়। নেত্রীর দাবি, এখন তাঁকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে ফোন, এসএমএস করে। অভিযোগ তুলে নিতে বলা হচ্ছে।

এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার  জন্য দিলীপ ঘোষ ও অমলেন্দু চট্টোপাধায়কে ফোন করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

Comments are closed.