খরচা কমানোর কথা বললেও, প্রধানমন্ত্রী নিবাস থেকে সপ্তাহান্তে হেলিকপ্টারে বাড়ি যাতায়াত ইমরানের, বিতর্ক

গত ১৯ অগাস্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নয়া পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান খরচা কমানোর জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিলাসবহুল জীবন যাপন করবেন না। প্রধানমন্ত্রী নিবাসকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করবেন, কমাবেন তাঁর তদারকিতে থাকা কর্মীর সংখ্যা। বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নিবাসে তাঁর পূর্বতনদের যে ৩৩ টি বিলাসবহুল গাড়ি আছে সেগুলি নিলামে তুলবেন। জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ কেউ বিমানের প্রথম শ্রেণীতে যাতায়াত করতে পারবেন না। এক কথায় বিলাসবহুল ভিভিআইপি সংস্কৃতি থেকে যে তিনি বেরিয়ে আসতে চান, তা পরিষ্কার করেছিলেন।
তাঁর এই ভাষণের ১০ দিনও অতিক্রম হয়নি, ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়ি থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিবাস হেলিকপ্টারে যাতায়াত নিয়ে পাক সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ইসলামাবাদের প্রধানমন্ত্রী নিবাস (যেখানে সপ্তাহে কাজের দিনগুলিতে ইমরান থাকেন) থেকে বানিগালায় নিজের বাড়িতে যেতে (এখানে প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনগুলি কাটান) হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। সরকারিভাবে, বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এই হেলিকপ্টার সফরের খরচ নাকি প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ টাকা। যদিও বেসরকারি মতে, তাঁর প্রতি সফরের খরচ ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি। কারও মতে আবার যাতায়াত মিলে খরচ ২-৩ লক্ষ টাকাও হতে পারে। জানা গেছে, পাক প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই সাপ্তাহিক সফরের জন্য ইতালি থেকে আনা অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড ১৩৯ শ্রেণীর একটি দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। যেখানে আট জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে বিলাসবহুল জীবনের বাইরে থাকার কথা বলছেন, কঠোরতার সঙ্গে অর্থের অপচয় কমানোর কথা বলছেন, সেখানে তাঁর এই হেলিকপ্টার সফরের কী প্রয়োজন পড়ল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, রাস্তাঘাটে জ্যামে আটকে পড়া কোনওদিনই পছন্দ করতেন না ইমরান খান। তাই তিনি চান না প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করলে, তাঁর নিরাপত্তার কারণে রাস্তা আটকে রাখা হোক আর তাতে জন সাধারণের ভোগান্তি বাড়ুক। তাই সড়ক পথ ছেড়ে তিনি আকাশপথই ধরেছেন সপ্তাহান্তে বাড়ি যেতে। আরও বলা হচ্ছে, তিনি গাড়িতে যাতায়াত করলে রাস্তায় যে পরিমাণ নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করতে হতো হেলিকপ্টারে যাতায়াত করলে খরচ তার তুলনায় কম। শাসক দলের দাবি, আগে যেভাবে রিকশা ব্যবহারের মতো কথায় কথায় হেলিকপ্টার ব্যবহার হত, হেলিকপ্টার করে খাবার আনা হত, ইমরান তো আর তা করছেন না।
যদিও এতে দমানো যাচ্ছে না বিরোধীদের। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন এর এক নেতা জানিয়েছেন, যদি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে আপত্তির কিছু নেই। তবে তাঁর কটাক্ষ, ইমরানই এই বিষয়টিকে এক সময় উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়ে এর বিরোধিতা করেছিলেন। নাওয়াজ শরিফ ব্যবহার করলে তা খারাপ, আর ইমরান ব্যবহার করলে তা গঠনমূলক, এই দ্বিচারিতার বিরোধিতা করেছে নাওয়াজ শারিফের দল।
খরচা কমানোর জন্য ইমরানের অন্যান্য প্রস্তাবেরও বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে বলছেন, ইমরান প্রধানমন্ত্রী নিবাসে থাকলে তাঁর নিরাপত্তা ও দেখভালের জন্য যে খরচ তা কমার সম্ভবনা কম। যদি না সেখান থেকে কর্মী কমানো হয়। আর প্রধানমন্ত্রী নিবাসকে বিশ্ববিদ্যালয় করার যে কথা বলা হচ্ছে তাও কতটা সম্ভব তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী যে বাড়িতে থাকবেন সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে পড়ুয়ারা রোজ হাজারো নিরাপত্তাজনিত তল্লাশি পেরিয়ে পড়তে যাবেন? এই মন্তব্যও শোনা যাচ্ছে পাক সোশ্যাল মিডিয়াতে। অনেকে বলছেন ৩৩ টা বিলাসবহুল গাড়ি না বেচে তো ইমরান হেলিকপ্টার নিলামে তুলতে পারতেন, অনেক টাকা আসত!

Comments are closed.