বিজেপিকে হারিয়ে তিন রাজ্যে সরকার গড়ছে কংগ্রেস, অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করে অচল করে রেখেছে কেরল বিধানসভা

একদিকে যখন বিজেপিকে হারিয়ে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে সরকার গড়ছে কংগ্রেস, তখনই সাবরীমালা ইস্যুতে একরকম বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস দিনের পর দিন অচল করে রাখছে কেরল বিধানসভা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ১১ দিন কংগ্রেসের বিরোধিতায় অচল হয়ে রয়েছে কেরল বিধানসভা।
সাবরীমালা ইস্যুতে কেরলের সিপিএম সরকার ঠিকঠাক পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যার জেরে রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে বলে একযোগে অভিযোগ তুলছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন পাল্টা অভিযোগ করেন, বিরোধীরা সাবরীমালা ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে অযথা জট পাকাচ্ছে। বিধানসভায় বিজয়নের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য কংগ্রেস। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন আক্রমণ করেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বকে। বলেন, রাহুল গান্ধীকে নয়, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে অনুসরণ করছে কংগ্রেস। আর এতেই আগুনে ঘি পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীরা একযোগে বামেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিবর্তিত হয় বিতর্ক সভায়। সাবরীমালা ইস্যুতে বাম সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কংগ্রেসসহ তিন বিরোধী বিধায়ক ভি এস শিবকুমার, এন জয়রাজ ও পারাক্কল আবদুল্লা বিধানসভার বাইরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেন। তারপর কেটে গিয়েছে ১১ দিন। এই ১১ দিন ধরে বিধানসভায় অচলাবস্থা জারি রয়েছে। অনশন প্রত্যাহার করেননি ৩ বিধায়ক।
বৃহস্পতিবার সকালে কেরল বিধানসভায় বাম সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় বিরোধীরা। ৩ বিধায়কের ‘সত্যাগ্রহ’ সমর্থন করে কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক রমেশ চিন্নিথলা বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা করেন। কংগ্রেস নেতা বামেদের অবস্থানকে ‘শত্রুতাপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন।
চলতি বছরের সেপ্টেবর মাসে সাবরীমালা ইস্যুতে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রাচীন প্রথা ভঙ্গ করে সব বয়সী মহিলা সাবরীমালা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারবেন বলে রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়কে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ পদক্ষেপ বলে ঘোষণা করে তাকে স্বাগত জানায় কেরলের সিপিএম সরকার। যদিও মন্দিরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ‘ক্ষুন্ন’ করা হচ্ছে দাবি করে এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে বিজেপি এবং আরএসএস। তাতে বিজেপির সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় কংগ্রেসও। অন্যদিকে পিনারাই সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করার জন্য পদক্ষেপ করলে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় চূড়ান্ত অশান্তির পরিবেশ।
ঋতুমতী মহিলা প্রবেশ করলে আয়াপ্পা দেবতাকে অসম্মান করা হবে এবং মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে, এই দাবিতে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ঘোষণা করেন, প্রধান দরজা দিয়ে কোনও মহিলা ঢোকার আগেই তিনি প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেবেন। এত দিনেও মন্দিরে কোনও মহিলা দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেননি আরএসএস এবং বিজেপির আন্দোলনের জেরে। বিজেপি ও আরএসএসের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে কেরলের সিপিএম সরকার। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণণ আরএসএস ও বিজেপি কর্মীদের সাবরীমালা ইস্যুতে আন্দোলনকে খালিস্তানীদের মতো বলে আক্রমণ করেন।
এদিকে বিধানসভা অধিবেশনে সাবরীমালা ইস্যুতে বাম সরকারকে একযোগে কটাক্ষ করে বিরোধীরা। পাল্টা সুর চড়ান বিজয়নও। তারপর থেকেই ‘সাবরীমালা জট’ অব্যাহত কেরল বিধানসভায়।

Comments are closed.