ব্রিগেড সমাবেশে মমতার পাশে কংগ্রেস, অন্যদিকে কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা সিপিএমের

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক বিচিত্র সময় আজ। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে কংগ্রেস, অন্যদিকে কংগ্রেসের পাশে সিপিএম। শেষ পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনে কী রাজনৈতিক সমীকরণ দাঁড়াবে তা সময়ই বলবে, কিন্তু ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধায়ের ডাকে ঐতিহাসিক সমাবেশের দিন পর্যন্ত অন্তত এটাই রাজ্যের ছবি।
ব্রিগেড সমাবেশে নিজে না থাকলেও রাহুল গান্ধী শুক্রবারই চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রীকে। শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশের জন্য। প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন সাংসদ অভিষেক মনু সিঙভি এবং বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। এই সমাবেশ থেকেই বিজেপিকে হঠানোর ডাক দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানান অভিষেক মনু সিঙভি। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো রাহুল গান্ধীর চিঠির সূত্র ধরে ফের কংগ্রেসকে এরাজ্যে জোটের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। শুক্রবার রাহুল গান্ধীর পাঠানো চিঠির সূত্র ধরে লিখিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক।

প্রতিক্রিয়ায় সূর্যকান্ত মিশ্র লিখেছেন, ‘কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এ-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা বার্তায় লিখেছেন গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই প্রকৃত জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়ন সম্ভব। তিনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো এই তিন প্রশ্নেই এই রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ রাজ্যে তৃণমূল পঞ্চায়েত-পৌরসভা থেকে লোকসভা পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে ভোট লুঠ করেই চলেছে। মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার এখানে বিপন্ন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের ওপরে ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে। এই আক্রমণের হাত থেকে কংগ্রেস কর্মীরাও বাদ যাননি। পুলিশকে শাসক দলের অনুগত বাহিনীকে পরিণত করা হচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা ও দুর্বৃত্ত বাহিনী ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। পশ্চিমবঙ্গে দলিত, তফসিলি জাতি, আদিবাসী মানুষ ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রাম-শহরে কাজ নেই, মানুষ কাজের খোঁজে রাজ্যান্তরী হচ্ছেন। চা বাগান থেকে জঙ্গলমহলে অনাহার, অর্ধাহার, কাজের অভাবে হাহাকার। বিজেপি ও তৃণমূল সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে পরস্পরের পরিপূরক। প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণে পশ্চিমবঙ্গের সম্প্রীতি ও ঐক্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেই দুই দল নষ্ট করছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা মনে করি বিজেপি ও তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির সমবেত হওয়া প্রয়োজন। দেশ ও রাজ্যকে বাঁচাতে তা প্রয়োজন।
আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য রাখব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা কী অবস্থান নেন, ভবিষ্যতে তা নিয়ে আমরাও আমাদের অভিমত দেব।’

কংগ্রেসও যে এরাজ্যে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে একথা উল্লেখ করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক পরিষ্কারই লিখেছেন, এরাজ্যে বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির সমবেত হওয়া দরকার। সূর্যকান্ত মিশ্রর প্রতিক্রিয়ায় ফের স্পষ্ট, ২০১৬ সালের মতোই ২০১৯ নির্বাচনেও কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট চান তাঁরা।

Comments are closed.