বাম-গান্ধী মিশেলে পর্তুগালে বাজিমাত আন্তোনিও কোস্টার, বামেদের সঙ্গে জোট বেধে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের দোড়গোড়ায় সোশ্যালিস্টরা

পর্তুগালের সাধারণ নির্বাচনে বাজিমাত সোশ্যালিস্ট পার্টির। আগেরবারের চেয়েও আসন বাড়িয়ে ক্ষমতা দখলের শেষ ল্যাপে লিসবনের গান্ধী নামে পরিচিত আন্তোনিও কোস্টার দল। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়াকে হেলায় উড়িয়ে ২৩০ আসনের পার্লামেন্টে ১০৬ টি আসন পেতে চলেছে পর্তুগালের সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএস)। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে তারা মাত্র ১০ টি আসন দূরে দাঁড়িয়ে। সেক্ষেত্রে সরকার গড়তে দেশের বাম দলগুলোর সঙ্গে ফের জোট বাঁধতে পারেন আন্তোনিও কোস্টা, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএস) পেয়েছিল ৮৬ টি আসন। এবার তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৬.৬৫ শতাংশ। সেখানে আন্তোনিও কোস্টার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (পিএসডি) পেয়েছে ২৭.৯ শতাংশ ভোট। এর ফলে দ্বিতীয়বার পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছে আন্তোনিও কোস্টা। যাঁর ভারত-যোগ বহু প্রাচীন।

মহাত্মা গান্ধীর ধারায় রাজনীতি করেন বলে আন্তোনিও কোস্টাকে সেদেশে আদর করে ডাকা হয় লিসবনের গান্ধী নামে। আন্তোনিও কোস্টার ঠাকুরদা আমৃত্যু ছিলেন গোয়ার বাসিন্দা। আন্তোনিও কোস্টার বাবা অর্ল্যান্ডো ডি কোস্টার জন্ম আরেক পর্তুগিজ কলোনি মোজাম্বিকে। কিন্তু তিনি কখনওই গোয়া তথা ভারতকে ভোলেননি। বামপন্থী মতাদর্শের লেখক অর্ল্যান্ডো ডি কোস্টার স্মরণীয় কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধগুচ্ছ।

২০১৭ সালে গোয়ায় নিজের পৈত্রিক ভিটে ঘুরে গিয়েছেন পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় তাঁর হাতে প্রবাসী ভারতীয় সম্মান তুলে দেয় ভারত সরকার। কোঙ্কনিরা আন্তোনিও কোস্টাকে ডাকেন বাবুশা নামে। যার অর্থ হল অত্যন্ত আদরের মানুষ। এবার বিপুল জয়ের পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এখানেই অবশ্য কোস্টার ভারত যোগের শেষ নয়। রাজনীতির যে ধারায় কোস্টা লড়াই করছেন, তার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শের হুবহু মিল আছে বলে মনে করেন সেদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আন্তোনিও কোস্টা নিজে বারবার তাঁর উপর মহাত্মার প্রভাবের কথা উল্লেখও করেছেন। সেইসঙ্গে তাঁকে আকর্ষণ করত, বামপন্থী সমাজচেতনা। এই দুই ধারার অনবদ্য মিশেলেই দ্বিতীয় দফায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লুইস ফিগোর দেশ শাসনের ভার রয়ে গেল তাঁর হাতেই, এমনটাই মনে করছেন পর্তুগিজ পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি ইউরোপে ডেনমার্ক, স্পেন, ফিনল্যান্ড, সুইডেনের পর আরও একটি দেশে বাম ঘেঁষা রাজনীতির জয়জয়কার। যা আগামী দিনে ইউরোপের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.